বাসস ক্রীড়া-৪ : রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রিভিউ

240

বাসস ক্রীড়া-৪
ফুটবল-বিশ্বকাপ- প্রিভিউ
রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রিভিউ
এ’ গ্রুপ
ঢাকা, ১০ জুন ২০১৮ (বাসস): আগামী ১৪ জুন শুরু হতে যাচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮। এরই মধ্যে ফুটবল ভক্তদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে আসর শুরুর গ্রুপ পর্ব। কোন দল কোন গ্রুপে পড়েছে এবং কোন গ্রুপ থেকে কোন দলটি নক আউট পর্বে উঠে আসবে ইত্যাদি নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের দল এবং ম্যাচ পর্যালোচনা।
রাশিয়া, সৌদি আরব, মিশর ও উরুগুয়ে
রাশিয়া: ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বকাপে স্বাগতিক দল ভাল খেলে আসলেও , এবার পারফর্মেন্সের দিক থেকে রাশিয়া দলের আত্মবিশ্বাস খুবই সীমিত। ২০০৮ সালের ইউরোর সেমি-ফাইনালে খেলা দলটিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান দলটি ফিফা র‌্যাংিকিংয়ে নেমে গেছে ৬৬তম অবস্থানে। যেটি তাদের জন্য এ পর্যন্ত সর্বনিন্ম অবস্থান। ১০ বছর আগের ইউরো আসরের পর এ পর্যন্ত আর কোন আন্তর্জাতিক আসরে তারা গ্রুপ পর্ব অতিক্রম করতে পারেনি।
ইউরো ২০১৬ এর পর কোচ স্তানিস্লাভ চেরচেসভের অধীনে থাকা দলটির ফলাফলকে কোনভাবেই ইতিবাচক বলা যাবেনা। তার অধীনে দলটি ৫ ম্যাচে জয় ও ৫টিতে ড্রয়ের বিপরীতে হেরেছে আট ম্যাচে। মাঠের বাইরেও দলটিতে অনেক সমস্যা বিরাজ করছে। খেলোয়াড় ও কোচের মধ্যে বিভেদ রয়েছে বলেও প্রচার আছে। আর দুই বছর আগে ফ্রান্স ইউরোতে রুশ দাঙ্গাবাজদের কার্যক্রম সম্পর্কে সবাই নিশ্চিয় অবগত।
এবারের আসরের ড্রয়ে রাশিয়া যে গ্রুপে পড়েছে সেটিকে খুব বেশী কঠিন বলার সুযোগ নেই। অতীতে স্বাগতিক দলকে আরো বেশী শক্তিশালী গ্রুপে থেকে লড়াই শুরু করতে হয়েছে। এই গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা তাদের জন্য খুব একটা কঠিন হবেনা। গ্রুপ পর্বে ২য় স্থান নিশ্চিত করে রুশদের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠার সম্ভাবনা বেশী।
সৌদি আরব: বাছাইপর্বে বেশ কঠিন গ্রুপের বাঁধা অতিক্রম করে এসেছে সৌদি আরব। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন জাপানের চেয়ে এক পয়েন্ট কম নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সমান পয়েন্ট পাওয়া দলটি গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে গ্রুপের দ্বিতীয় অবস্থান নিশ্চিত করে।
১৯৯৪ বিশ্বকাপে বিশ্ব ব্যাপী বেশী পরিচিতি পায় মধ্য প্রাচ্যের দেশটি। ওই আসরে দ্বিতীয় পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় সৌদি আরব। গ্রুপ পর্বে হল্যান্ড ও বেলজিয়ামের সঙ্গে ড্র করে তারা। সাঈদ আল ওয়াইরিয়ানের দেয়া গোলটি আসরের সেরা গোলের তালিকায় জায়গা করে নেয়।
এরপর ১৯৯৮, ২০০২ ও ২০০৬ সালে আরো তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছে সৌদি আরব। তবে পার হতে পারেনি গ্রুপ পর্ব। দক্ষিন আফ্রিকা ও ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত পরবর্তী দুই বিশ্বকাপে অবশ্য অংশগ্রহনই করতে পারেনি তারা। এবারের আসরেও তারা গ্রুপ পর্ব অতিক্রম করতে না পারার সম্ভাবনা বেশী। বড় জোর একটি ম্যাচে ড্র করতে পারে। সে হিসেবে গ্রুপের তলানীতেই স্থান হতে পারে সৌদি আরবের।
মিশর: বিশ্বকাপে ফেরার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে মিশরকে। রেকর্ড সংখ্যক ৭বার আফ্রিকা অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন এই দলকে ১৯৯০ সালের পর আর দেখা যায়নি। বিশ্বকাপের বাকী আসর তাদের দেখতে হয়েছে সাইডলাইনে থেকে। ২০১২ ও ২০১৫ সালের আফ্রিকা নেশন্স কাপেও ব্যর্থ হয়েছে ফারাওরা। অবশ্য গত আসরের ফাইনালে খেলেছে মিশর। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ফুটবলের সর্ববৃহৎ আসরে পৌঁছে গেছে নীল নদের দেশটি। ভবিষ্যতের ব্যালন ডিঅঁর খেতাব জয়ের সম্ভাবনায় থাকা লিভারপুলের স্ট্রাইকার মোহাম্মদ সালাহ দলকে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রেখেছেন। তবে সদ্য শেষ হওয়া উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ফাইনালে ঘাড়ের ইনজুরিতে পড়েছেন দলের আশা ভরসার প্রতীক সালাহ। গোটা দেশ তথা বিশ্ব চেয়ে আছে তার সুস্থতা ফিরে পাওয়ার দিকে।
তবে এই দলটি তাদের গ্রুপ প্রতিপক্ষ উরুগুয়ের বিপক্ষে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয়না। স্বাগতিক রাশিয়ার সঙ্গে তাদের হতে পারে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ওই লড়াইয়েও স্বাগতিকদের এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশী থাকবে।
উরুগুয়ে: দক্ষিন আমেরিকার বাছাইপর্বে শুধুমাত্র ব্রাজিল ছিল পারফর্মেন্সের দিক থেকে উরুগুয়ের চেয়ে এগিয়ে। দলে থাকা বেশ কিছু বিশ্বমানের তারকা নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ অবস্থানটি অর্জন করতে চায় উরুগুয়ে।
দিয়াগো গুডিনের বয়স ৩১ এবং এডিনসন কাভানি ও লুইস সুয়ারেজের বয়স ৩০ বছর হলেও তারা এখনো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তারকাদের আসনে রয়েছেন। দুটি বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের পর আর এর ধারে কাছে যেতে পারেনি উরুগুয়ে। সর্বশেষ ২০১০ সালের বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনাল খেলেছিল তারা। এর পুনরাবৃত্তিও আর ঘটাতে পারেনি উরুগুয়ে।
দলটির আরো কিছু তরুন মেধাবী খেলোয়াড় বিশ্ব র‌্যাকিংয়ে এগিয়ে আসছে। এদের মধ্যে আছেন টিনএজ ফেড্রিকো ভালভার্দে এবং ২১ বছর বয়সি নাহিতান ন্যান্ডেজ। এই নিয়ে তৃতীয়বারের মত বিশ্বকাপগামী উরুগুয়ের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন অস্কার তাবারেজ। সব মিলিয়ে চারটি বিশ্বকাপ দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
গ্রুপ পর্বে প্রথম স্থান অর্জনের জন্য যতটুকু দরকার এর বেশী যোগ্যতা রয়েছে উরুগুয়ের। গ্রুপভুক্ত সৌদি আরব ও মিশরের তুলনায় তারা অনেক বেশী এগিয়ে। স্বাগতিক দর্শকদের ¯্রােতের বিপরীতে গিয়ে তারা বড়জোর ড্র করতে পারে রাশিয়ার সঙ্গে।
গ্রুপ প্রিভিউ: বি’
পর্তুগাল, স্পেন, মরক্কো ও ইরান
পর্তুগাল: নিজেদের দক্ষতা এবং খ্যতিমান খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত পর্তুগাল দীর্ঘ সময় ধরেই ভয়ঙ্কর দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছে। যে কোন বড় টুর্নামেন্টে তারা বাজির ঘোড়া হয়ে উঠতে পারে। অর্জন করতে পারে সামর্থ্যরে চেয়ে বেশী। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরেই দলটির আলোচিত খেলোয়াড়ের আসন দখল করে আছেন রিয়াল মাদ্রিদ সুপার স্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ৩৩ বছরে পৌঁছে যাওয়া এই ফুটবল সুপার স্টারের জন্য এটিই হতে পারে ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ।
দুই বছর আগে ইউরোতে যে পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেছে এখন এর চেয়ে বেশী দূরে চলে গেছে পর্তুগাল। অপেক্ষা কৃত খর্ব শক্তির দলটি গ্রুপ পর্বে স্পেনের পেছনে থেকে অর্জন করতে পারে দ্বিতীয় স্থান।
স্পেন: ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সব বড় আসরে বিজয়ী স্পেন ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। তবে এখন কোচ জুলেন লোপেতেগুইয়ের অধীনে দলটি আবার পুর্ন ফর্ম ফিরে পেয়েছে। এখন আরো একবার বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলতে চায় ২০১০ আসর জয়ী স্পেন।
লা রোজাদের এই মুহুর্তে কিছুটা দূর্বলতা হচ্ছে আক্রমনভাগে। বিগত বছর গুলোতে দলের আক্রমনভাগে কোন স্ট্রাইকারই স্থায়ী আসন গাড়তে পারেনি। তবে এমন নয় যে দলটি একেবারেই খারাপ অবস্থানে। তরুন তারকা মার্কো এসেনসিও সেখানে দারুন দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেন। সেই সঙ্গে সেখানে ভুমিকা রাখতে পারেন ভ্যালেন্সিয়া তারকা রড্রিগো এবং সালভাটর সিলাচি।
দলের বাকী সদস্যদের নাম যে কোন দলের জন্য ভীতিকর। এদের মধ্যে আছেন ডেভিড ডি গেয়া, যিনি বিশ্বের সেরা গোল রক্ষকদের মধ্যে অন্যতম। আর মধ্যভাগে যারা আছেন তাদের মধ্যে কাকে রেখে কাকে সেরা বলা যাবে সেটি নিয়ে ভাবতে হবে দীর্ঘক্ষন।
বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সম্প্রতিক প্রীতি ম্যাচে স্পেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে এবং ৬-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে আর্জেন্টিনাকে। এই তথ্যগুলোই দলটির সামর্থ্য প্রমানের জন্য যথেষ্ঠ। গ্রুপ পর্ব বিষয়ে এই দলটি সম্পর্কে আলোচনা না করাই শ্রেয়। গ্রুপের শীর্ষে থেকেই দলটি দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবে ধারনা করা হচ্ছে।

মরক্কো: আফ্রিকান অঞ্চলের বাছাই পর্বে সি’ গ্রুপের সেরা দল হিসেবে বিশ্বকাপের চুড়ান্ত আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে মরক্কো। গ্রুপের ডাকসাইটে দল আইভরি কোস্ট, গ্যাবন ও মালিকে পেছনে ফেলেই প্রথম স্থান অর্জণ করেছে তারা। ১৯৯৮ সালের পর প্রথম বিশ্বকাপের চুড়ান্ত পর্বে ওঠার পথে বাছাইপর্বের কোন ম্যাচেই পরাজিত হয়নি মরক্কো।
মেধি বেনাটিয়া, ইউনিস বেলহান্দা ও হেকিম জিয়েচের মত মেধাবী তারকা নিয়ে মহাদেশীয় আসরে ভাল ফলাফল করলেও বিশ্ব আসরের জন্য যথেষ্ঠ শক্তিশালী নয় সাহারা মরুভুমির প্রান্তে অবস্থিত দেশটি। স্পেন বা পর্তুগালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবেনা এই আফ্রিকান দেশের।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে মরক্কো যদি ইরানের বিপক্ষে জয় লাভ করে এবং পর্তুগাল স্পেনের কাছে হেরে যায়, তাহলে এটলাস লায়নও ২০১৬ ইউরো চ্যাম্পিয়নদের মধ্যকার ম্যাচ হয়ে উঠতে পারে দারুন আকর্ষনীয়। তবে গ্রুপ পর্বে তারা তৃতীয় স্থানে থাকবে বলে অনুমান করা যাচ্ছে।
ইরান: এশিয়া থেকে সবার আগে বিশ্বকাপে অংশগ্রহন নিশ্চিত করেছে ইরান। গত জুনে উজবেকিস্তানকে ২-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট লাভ করে বছাইপর্বের ১৮টি ম্যাচে অপরাজিত থাকা ইরান। এই নিয়ে পঞ্চমবারের মত বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাচ্ছে ইরান। কোচ কার্লোস কুইরোজ এবারের আসরে দলকে নকআউট পর্বে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য স্থির করেছেন।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে কোনভাবেই নকআউট পর্বে খেলার সুযোগ নেই ইরানের। স্পেন বা পর্তুগালের মত গ্রুপ প্রতিপক্ষকে টপকে এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবার নয়। আফ্রিকান প্রতিপক্ষ মরক্কোও সম্ভাবনার দিক থেকে তাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে গ্রুপের তলানীতেই থাকতে হতে পারে ইরানকে।
গ্রুপ প্রিভিউ: সি
ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, পেরু ও ডেনমার্ক
ফ্রান্স: যে কোন বড় টুর্নামেন্টে ফ্রান্স থাকে ফেভারিটের তালিকায়। ২০১০সালের বিশ্বকাপে হতাশাজনক পারফর্মেন্সের পর দারুন উন্নতি ঘটেছে ফ্রান্সের। সর্বশেষ ২০১৬ ইউরোর ফাইনালে অংশ নিয়েছে স্বাগতিক ফরাসিরা। তবে চুড়ান্ত ম্যাচে পর্তুগালের কাছে হেরে শিরোপা জয় করতে পারেনি তারা।
এরপর লেস ব্লুসরা শুধু শক্তিই সঞ্চয় করেছে। দলে মেধাবী খেলোয়াড়ের সংখ্যা এতই বেড়েছে যে চুড়ান্ত স্কোয়াড গড়তে রিতিমত ঘাম ঝরেছে কোচ দিদিয়ের দেশ্যমের। তারপরও ২৩ সদস্যের বিশ্বকাপগামী চুড়ান্ত স্কোয়াডে তিনি রাখতে পারেননি কিংসলে কোম্যান, এন্থনি মার্টিয়াল এবং আলেক্সান্দ্রে ল্যাকাজেট্টির মত তারকাদের।
দলে ঠাই পাওয়াদের মধ্যে আছেন আতোয়ান গ্রিজম্যান, যিনি লা লীগায় দাপুটে পারফর্মেন্স দিয়ে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সেনসেশন হয়ে আছেন। লিস্টার সিটি ও চেলসির হয়ে পর পর চ্যাম্পিয়ন শিরোপা জয় করা এনগলো কন্টের মত তারকা। সেই সঙ্গে আছেন সর্বকালের সর্বাধিক দামী খেলোয়াড়দের তিনজন পল পগবা, ওসমানে ডেম্বেলে ও কিলিয়ান এমবাপে।
দিদিয়ের দেশ্যমের দলটি দুই বছর আগের চেয়েও অনেক বেশী শক্তিশালী বলে মনে করেন অনেকেই। তবে দেখার বিষয় হচ্ছে নানান বিতর্ক কাটিয়ে তিনি দলকে একীভুত করতে পারেন কিনা। সইে সঙ্গে মনোসংযোগের ঘাটতি পুরণ করতে পারেন কিনা। গ্রুপ পর্ব পার হবার জন্য একটি দলের যতটুকু সামর্থ্যের প্রয়োজন এর চেয়ে অনেক বেশী শক্তি ধারণ করে আছে ফরাসি দলটি। যে কারণে গ্রুপ শীর্ষ হয়েই পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি দলটির।
অস্ট্রেলিয়া: রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশ গ্রহনের জন্য যথেষ্ঠ ঘাম ঝড়াতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। গোল ব্যবধানে সৌদি আরবের চেয়ে পিছিয়ে থাকার কারণে সিরিয়া ও হন্ডুরাসের সঙ্গে প্লে অফের বাঁধা টপকে তবেই রাশিয়ার টিকিট নিশ্চিত করেছে সকারুসরা।
প্রধান কোচ এ্যাঞ্জে পস্তেকোগলু পদত্যাগ করায় বিশ্বকাপে দায়িত্ব পাওয়া বার্ট ফন মারউইক অন্তত দলটিকে নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার আশা করছেন।
এর বাইরে দলটির প্রধান ভিত্তি হচ্ছে তারুন্য নির্ভরতা। এই দলটিই অবশ্য চার বছর আগে অংশ নিয়েছিল ব্রাজিল বিশ্বকাপে। ২০১৫ সালে শিরোপা জয়ের মাধ্যমে দলটি বর্তমানে এএফসির চ্যাম্পিয়ন।
তারপরও সকারুসদের গ্রুপ পর্বের বাঁধা টপকাতে না পরার সম্ভাবনাই বেশী। কারণ ফ্রান্স ও ডেনমার্কের মত পাওয়ার হাউজের সঙ্গে লড়াই করতে হবে তাদের। গ্রুপের আরেক দল পেরুর সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন রাখার কোন সুযোগ নেই। সবকিছু মিলিয়ে গ্রুপের তলানীতেই হয়তো ঠাই হবে অস্ট্রেলিয়ার।
পেরু: ১৯৮২ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে ফিরেছে পেরু। উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে তারা পঞ্চম অবস্থান লাভ করেছিল। যে কারণে প্লে অফে খেলতে হয়েছে পেরুকে। যেখানে তারা নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের চুড়ান্ত আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ওয়াটার টাইট ডিফেন্স নিয়ে দলটি ২০১৭ সালের আট ম্যাচে মাত্র ৭ গোল হজম করেছে।
এবারের আসরে লড়তে যাবার আগে তাদের সামনে বড় একটি বিপর্যয় হিসেবে এসেছে দলের অধিনায়ক ও তারকা খেলোয়াড় পাওলো গুয়েরেরোর উপর ফিফার নিষেধাজ্ঞা। নিষিদ্ধ ঘোষিত কোকেন সেবনের অভিযোগে তার উপর ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য দেশটি আবেদন করলেও এখনো এর নিস্পত্তি হয়নি। সুতরাং এই নিষেধাজ্ঞার কারণে আসন্ন বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারবেননা এই ফুটবল তারকা।
বাছাই পর্বে পেরু কিছু কিছু ম্যাচে বেশ ইতিবাচক ফলাফল করেছে। এছাড়া আর্জেন্টিনার মত দলের সঙ্গে দুইবার ড্র করার পাশাপাশি হারিয়েছে উরুগুয়েকে। কোচ রিকার্ডো গ্যারেসা দলটিকে একতাবদ্ধভাবে রেখেছেন এবং রাশিয়ায় ভাল কিছু করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন।
তারপরও দলটির গ্রুপ পর্বের বাঁধা অতিক্রম নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। দ্বিতীয় অবস্থান পাওয়ার মতও উপযুক্ত নয় পেরু। তবে হয়তো অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এগিয়ে থেকে তৃতীয় স্থানেই থাকতে হবে দলটিকে।
ডেনমার্ক: ২০১২ সালের ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশীপের পর বড় কোন আসরে খেলা হয়নি ডেনমার্কের। পোল্যান্ড ও মন্টেনেগ্রোর কাছে পরপর দুই হারের পর ১১ ম্যাচে অপরাজিত ছিল ডেনমার্ক। শেষ পর্যন্ত পোল্যান্ডের কাছে শীর্ষস্থান খোয়ানোর কারণে রাশিয়ার টিকিটের জন্য প্লে অফে অংশ নিয়েছে ডেনমার্ককে। যেখানে তারা আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রকে হারিয়ে সফলতা লাভ করে।
ডেনমার্কের বড় অনুপ্রেরনা হচ্ছে যাদুকরী খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন। টোটেনহ্যাম হটস্পারের হয়ে এই মৌসুমে তিনি ১০ গোল কারার পাশাপাশি সহায়তা করেছেন ১১ গোলে। ডেনমার্কের অন্য উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়দের মধ্যে আছেন লিস্টার সিটির গোল রক্ষক ক্যাসপার, সেভিয়ার ডিফেন্ডার সিমন কেযায়ের ও রোজেনবার্গের স্ট্রাইকার নিকোলাস বেন্ডটনার।
এই দলটির ফ্রান্সকে বিপদে ফেলার মত যোগ্যতা রয়েছে। যে কারণে গ্রুপভুক্ত পেরু ও অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এগিয়ে থাকবে ডেনমার্ক।
গ্রুপ প্রিভিউ: ডি
আর্জেন্টিনা,আইসল্যান্ড, ক্রেয়েশিয়া, নাইজেরিয়া।
আর্জেন্টিনা : এটি বিশ্বাস করতেও কস্ট হয় যে আর্জেন্টিনার মত দলকে বিশ্বকাপের চুড়ান্ত পর্বে কোয়ালিফাই করতে শেষ ম্যাচটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের মুল আসরে আর্জেন্টিনা। এখন গোটা বিশ্ববাসীর দৃস্টি আর্জেন্টিনার উপর নিবদ্ধ। কারণ সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের কাতারে থাকা লিওনেল মেসি রয়েছেন আর্জেন্টিনা দলে।
আর্জেন্টিনার বর্তমান দলটিতে মেধাবিদের ছড়াছড়ি। সেখানে আক্রমন ভাগেই রয়েছে অধিকাংশ তারকা। যেমন রয়েছেন লিওনেল মেসি, গঞ্জালো হিগুইন, পাওলো দিবালা এবং সার্জিও এগুয়েরো। এত তারকার ভিড়ে শেষ পর্যন্ত ইন্টার মিলানের অধিনায়ক ও সিরি এ লীগে যৌথ সর্বোচ্চ গোলদাতা মাওরো ইকার্ডিকে দলে রাখতে পারেননি কোচ।
তবে গোল রক্ষক হিসেবে তিনি পাচ্ছেন চেলসির দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় থাকা উইলি ক্যাবালোরোকে। তবে রক্ষন ও মধ্য মাঠের জন্য তিনি যে সব খেরোয়াড়দের পাচ্ছেন তাদের উপর খুব বেশী ভরসা করা যায়না। তারপরও দলে নিকোলাস ওটামেন্ডি ও এঞ্জেল ডি মারিয়ার মত তারকা খেলোয়াড় আছেন।
প্রশ্ন রয়েছে এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে নিয়োগ পাওয়া দেশটি তৃতীয় কোচ জর্জ সাম্পাওলিকে নিয়েও। বর্তমান কোচ সাম্পাওলি দায়িত্ব নিয়ে এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক মাত্র একটি ম্যাচে জয়ের স্বাদ পেয়েছেন। যে কারণে আসন্ন রাশিয়া সফরে আর্জেন্টিনা কি সফল হবে, নাকি ২০০২ সালের মত গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হবে সেটিই দেখার বিষয়। তবে আপাত দৃস্টিতে গ্রুপ শীর্ষ দল হিসেবে তাদের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠার সম্ভাবনা কমই মনে হচ্ছে।
আইসল্যান্ড: মাত্র ৩ লাখ ৪০ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুসিত আইসল্যান্ড বিশ্বকাপের চুড়ান্ত আসরে অংশগ্রহনকারী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট দেশ। বিষ্ময়করভাবে তাদের উত্থান। বিশ্বকাপের চুড়ান্ত আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জনকারী দলটি ২০১৬ ইউরো টুর্নামেন্টেও চুড়ান্ত আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এখানেই শেষ নয়, ওই আসরে তারা ইংল্যান্ডের মত দলকে হটিয়ে পৌছে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে।
ক্রোয়েশিয়া ও ইউক্রেনকে পেছনে রেখে বিশ্বকাপের টিকিট অর্জনের মাধ্যমে তারা প্রমান করেছে কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে বড় কিছু অর্জন করা যায়। যেটি তাদেরকে প্রথমবারের মত বিশ্বের সব চেয়ে বড় মঞ্চে পৌছে দিয়েছে। তবে বিশ্ব আসরে গিয়েই যে দলটি কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলতে পারবে সে রকম ভাবার কোন কারণ নেই। তবে দলের দুই গুরুত্বপুর্ন তারকা জিলফি সিগার্ডসন ও অ্যারন গানারসন ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে আসছেন। এটি খুবই ভাল সংবাদ। এখন দেখা যাক দুই বছর আগের মত দক্ষতা গ্রুপ পর্বে প্রদর্শন করতে পারে কিনা। যেমনটি তারা করেছিল পর্তুগাল ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
গ্রুপের বাকী দলগুলোও এবার যথেষ্ঠ হোম ওয়ার্ক করেই বিশ্ব মঞ্চে আসছে। তাই আইসল্যান্ডকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বানী নেবিচকই হচ্ছে। গ্রুপের বাকী দলগুলো শক্তিশালী হওয়ায় তাদেরকে সেখানেই সংগ্রাম করতে হবে। ফলে তলানীতেই থাকতে পারে নবাগত দলটিকে।
ক্রোয়েশিয়া: টানা দ্বিতীয় বারের মত বিশ্বকাপের চুড়ান্ত পর্বে পৌঁছানোর জন্য বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে ক্রোয়েশিয়াকে। তবে যে ভাবে তারা শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের টিকিট সংগ্রহ করেছে সেটা অবশ্যই মনোমুগ্ধকর। অ্যান্টে ক্যাসিচের কাছ থেকে যখন নতুন কোচ হিসেবে জøাটকো ডেলিস দায়িত্ব গ্রহন করেন তখন গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ বাকী। এর আগেই ইউক্রেনকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে তারা। শেষ ম্যাচে গ্রীসের বিপক্ষে ৪-১ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া।
দলটির মধ্যমাঠে যেমন লুকা মড্রিক ও ইভান রাকিটিচের মত তারকা খেলোয়াড়রা আছেন তেমনি আক্রমনভাগে আছেন নিকোলা কালিনিচ, আন্দ্রেই ক্রামারিচ, ইভান পেরিসিচ ও মারিও মানজুকিচের মত ডাকসাইটে তারকা। যারা যে কোন শক্তিশালী রক্ষনভাগ ভেঙ্গে ফেলার যোগ্যতা রাখে।
যদিও বিশ্বকাপের ড্র ক্রোয়েশিয়ার প্রতি সদয় ছিলনা। যে কারণে ‘ডেথ গ্রুপেই’ ঠাই হয়েছে ক্রোয়েশিয়ার। এই গ্রুপ থেকে অবশ্য যে কোন দলই দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছে যেতে পারে। যদিও নিজেদের আসল দক্ষতা এখনো দেখাতেই পারেনি আর্জেন্টিনা। সেটি হলে তাদের সঙ্গে পাল্লা দেয়া যে কোন প্রতিপক্ষের জন্য কঠিন হবে। তবে সম্ভাবনার কথা বাদ দিলে এই মুহুর্তে গ্রুপ সেরা হিসেবে ক্রেয়েশিয়াকেই ধরা যেতে পারে।
নাইজেরিয়া: আফ্রিকা অঞ্চল থেকে প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের চুড়ান্ত টিকিট পেয়েছে নাইজেরিয়া। দলটি এমন এক গ্রুপ থেকে উঠে এসেছে যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিল আফ্রিকা অঞ্চলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ক্যামেরুন, সাবেক চ্যাম্পিয়ন জাম্বিয়া এবং ২০১০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহন করা আলজেরিয়া।
গত নভেম্বরে একটি প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে হারিয়েছিল সুপার ঈগলরা।
দলে রয়েছে বেশ কজন প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবলার। তবে গোটা দলটি মধ্যম মানের। শক্তিশালী আক্রমনভাগের সামনে সহজেই ভেঙ্গে পড়তে পারে তাদের দুর্বল রক্ষন। আর্জেন্টিনার শক্তিশালী আক্রমনবাগ এবং ক্রেয়েশিয়ার দুর্দান্ত মিডফিল্ডারদের সামনে টিকে থাকা কঠিন হবে সুপার ঈগলসদের জন্য। যে কারণে গ্রুপ পর্বে সর্বোচ্চ তৃতীয় স্থান দখল করতে পারে তারা।
গ্রুপ প্রিভিউ : ‘ই’
ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা ও সার্বিয়া
ব্রাজিল: ২০১৪ সালে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমি-ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে পরাজিত হয়েছিল ব্রাজিল। তবে এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে সেলেকাওরা। একক নির্ভরতা কমিয়ে মানসম্পন্ন খেলা দিয়ে ময়দানী লড়াইয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করছে।
কোচ তিতের অধীনে থাকা দলটি বাছাইপর্ব থেকে সবার আগে বিশ্বকাপের চুড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছে। বাছাই পর্বে ১৩ ম্যাচের সবকটিতেই জয়লাভ করেছে ব্রাজিল। আর প্রীতি ম্যাচে তিনটিতে ড্র এবং আর্জেন্টিনার বিপক্ষে একটি মাত্র ম্যাচে পরাজিত হয়েছে।
গত আসরে নেইমারের অনুপস্থিতির কারণে ব্রাজিলকে যেভাবে পরাজিত হতে হয়েছিল, এখন আর সেই অবস্থা নেই। তারা এখন আর একজন খেলোয়াড়ের উপর নির্ভরশীল নয়। কারণ গাব্রিয়েল জেসুস, রবার্তো ফিরমিনো এবং ফিলিপ কুটিনহোর মত ব্রাজিলীয় তারকারা এখন সম্মুখভাগে যে কোন রকম আক্রমনে পারদর্শী। শুধু তাই নয়, সেলেকাওদের রক্ষনভাগও এখন বেশ সমৃদ্ধ। যেখানে মান সম্পন্ন গোল রক্ষক ও ডিফেন্ডার রয়েছে।
চার বছর আগে ব্রাজিল হয়তো অহংকারি ছিল। কিন্তু এবার তাদের কিছু প্রমান করার আছে। দলটি গ্রুপ পর্বের বৈতরনী পার হওয়া নয় শিরোপা জয় করারও সম্ভাবনা রয়েছে। স্বভাবাবিক ভাবে শীর্ষস্থান নিয়েই ব্রাজিলের গ্রুপ পর্ব পার হবার সম্ভবনা বেশী।
সুইজারল্যান্ড: ২০০৯ সালে অনুর্ধ ১৭ বিশ্বকাপ জয় করেছিল সুইজারল্যান্ড। সেই দলটির জের্ডান শাকিরি এবং গ্রানিট জাকার মত মেধাবী গ্রুপ নিয়েই এবার রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড। সাকিরি ও জাকার মত তারকারা নিজেরদের দিনে যে কোন কিছু ঘটানোর দক্ষতা রাখেন।
এছাড়া দলে আছে কিছু উদীয়মান তারকা ফুটবলারও । এদের মধ্যে ব্রিল এমবোলো , এডমিলসন ফার্নান্দেস ও ম্যান্যুয়েল আকানজি উল্লেখযোগ্য। অভিজ্ঞ সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে এরা দারুন ভাবে মানিয়ে খেলতে পারেন। বাছাইপর্বে টানা নয় ম্যাচে জয়লাভ করেছিল সুইজারল্যান্ড। তারপরও বিতর্কিত এক ম্যাচ দিয়ে উত্তর আয়ারল্যান্ডকে টপকে চুড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছে দলটি।
গ্রুপ প্রতিপক্ষ ব্রাজিলের বিপক্ষে সুইজারল্যান্ড খুব একটা সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয়না। তবে তাদের যে দক্ষতা রয়েছে তাতে কোস্টারিকা ও সার্বিয়াকে ছাড়িয়ে যাবার সম্ভবনা বেশী। সব দিক বিবেচনায় গ্রুপ পর্বে তারা দ্বিতীয় অবস্থান লাভ করতে পারে। শুধু তাই নয়, দলটির নকআউট পর্বে পৌছানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।
কোস্টারিকা: ২০১৪ বিশ্বকাপে বিস্ময়কর পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেছে কোস্টারিকা। চার বছর আগে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ওই আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে অখ্যাত দলটি। সেখানে টাইব্রেকারে হল্যান্ডের কাছে হেরে যায় কোস্টারিকা।
লস টিকোর এই দলটির বড় অনুপ্রেরনা হল বিশ্ব সেরা গোল রক্ষক কেইলর নাভাস। তবে রক্ষনভাগের কয়েকজন মুখ্য খেলোয়াড় ‘বুড়ো’ পিড়ীত হওয়ায় তাকে বেশ পরীক্ষা দিতে হবে। যেমন দলের দুই গুরুত্বপুর্ন রায়ান রুইজের বয়স হয়ে গেছে ৩২, ক্রিস্টিয়ান বোলানোর ৩৪ বছর।
গত আসরের দলে ব্যাপক পরিবর্তন এনে এবার রাশিয়া বিশ্বকাপ স্কোয়াড গঠন করেছে কোস্টারিকা।পরিবর্তন ঘটেছে খেলার পদ্ধতিতেও। তথাপি দলটি দলটি খুব শক্তিশালী বলা যাবেনা। তারা যে হোম ওয়ার্ক করেছে তাতে ইতালী, উরুগুয়ে ও ইংল্যান্ডের মত ভাল অবস্থানেও নেই। যে কারণে গ্রুপের তলানীতে অর্থাৎ চতুর্থ স্থান নিয়েই শেষ হতে পারে কোস্টারিকার বিশ্বকাপ মিশন।
সার্বিয়া: আট বছর পর বাছাইপর্ব পেরিয়ে বিশ্বকাপের চুড়ান্ত আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে সার্বিয়া। ২০০৬ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত বিশ্বকাপ আসরে খেলতে যাচ্ছে তারা।
দলের বয়স্ক রক্ষনভাগ নিয়ে কিছুটা অভিযোগ রয়েছে। তবে ময়দানী লড়াইয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষনভাগ ভাঙ্গার দারুন সব কলাকৌশল ও সৃস্টিশীলতা রয়েছে তাদের। ধারের খেলোয়াড় হিসেবে ফুলহ্যামে যোগ দিয়েই সবার নজড় কেড়েছেন আলেক্সান্দার মিত্রোভিচ। দুই মিডফিল্ডার নেমেনজা ম্যাটিচ ও দুসান টেডিচও যথেষ্ঠ দক্ষ।
তবে শীর্ষ পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতা নেই কোচ ম্লাডেন ক্রাস্টাজিচের। বিশ্বকাপে ই গ্রুপ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সার্বিয়া আগামী ১৭ জুন সামারায় কোস্টারিকার মোকাবেলা করবে। আর ওই ম্যাচটিই হবে যে কোন পর্যায়ে প্রধান কোচ হিসেবে তার প্রথম প্রতিযোগিতামুলক ম্যাচ।
সার্বিয়া দলটি বেশ লড়াকু মেজাজের। তবে ব্রাজিল বা সুইজারল্যান্ডের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। যে কারণে গ্রুপের শীর্ষ দুইয়ে তাদের কোনভাবেই বিবেচনা করা যাচ্ছেনা। গ্রুপের তৃতীয় স্থান নিয়েই হয়তো এবারের আসর শেষ করবে সার্বিয়া ।
গ্রুপ এফ
লড়াই হবে জার্মানির পরের স্থান নিয়ে
বিশ্বকাপের ড্রয়ে এবার বেশ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ পেয়েছে চ্যাম্পিয়ন জার্মানী। এফ গ্রুপে তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে মেক্সিকো, সুইডেন ও দক্ষিন কোরিয়া। ১৯৬২ সালের পর প্রথম টানা বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের দ্বারপ্রান্তে জার্মানি। ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে টানা দুইবার বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করেছিল ব্রাজিল।
জার্মানির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ২০২২ সাল পর্যন্ত বাড়ানো কোচ জোয়াচিম লো দলটি এতটাই দক্ষদের নিয়ে গড়েছেন, যেখানে ঠাই হয়নি ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয়সুচক গোলদাতা মারিও গোটশেরও।
তারুন্য নির্ভর দল নিয়ে গত বছর রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত কনফেডারেশন কাপের শিরোপা জয় করেছে জার্মানি। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের সমর্থ্যের গভীরতার প্রমান দিয়েছে। ওই আসরের সেমি-ফাইনালে তারা মেক্সিকোকে হারিয়েছিল ৪-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে।
মেক্সিকো বেশ সহজভাবেই বছাইপর্বের বাঁধা অতিক্রম করে বিশ্বকাপের চুড়ান্ত আসর নিশ্চিত করেছে। তবে ‘এল ট্রি’রা বিগত ছয়টি বিশ্বকাপেই শেষ ষোল থেকে বিদায় নিয়েছে। যে কারণে এবারো তাদের লক্ষ্য থাকবে দলকে অন্তত একই উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। যে কারণে জার্মানীর পরের স্থানটির জন্য গ্রুপের বাকী তিনটি দল মেক্সিকো, সুইডেন এবং কোরিয়ার মধ্যে আকর্ষনীয় লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্লে অফে ইতালীকে নাটকীয়ভাবে হারিয়ে বিশ্বকাপের চুড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহনের সুযোগ লাভ করেছে সুইডেন। তবে জøাটান ইব্রাহিমোভিচ পরবর্তী সুইডেনকে হাল্কাভাবে নেয়ারও সুযোগ নেই। কারণ বাছাইপর্বে তারা ফ্রান্সের মত দলকে হারিয়ে দিয়েছিল।
২০০২ সালে জাপানের সঙ্গে যৌথভাবে বিশ্বকাপের আয়োজক দক্ষিন কোরিয়া ওই আসরের সেমিতে যাবার পর এখন বিশ্ব ফুটবলে আলোচিত নাম। ঘরোয়া ফুটবলের অধিকাংশ খেলোয়াড় নিয়ে তাদের স্কোয়াডটি গঠিত হয়েছে। আর বাইরে রয়েছে চীন ও জাপানে খেলা তারকারা।
আগামী ১৮ জুন নিজনি নভগোরদে সুইডেনের বিপক্ষে কোরিয়ার গ্রুপ পর্বের ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপর্ন। এর একদিন আগে অবশ্য মস্কোতে জার্মানি তাদের বিশ্বকাপ মিশনে নামবে মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে।
তবে গ্রুপের যে দলই ২য় অবস্থান নিয়ে পরের রাউন্ডে উঠে আসুকনা কেন, সেখানে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পেতে পারে সুপার পাওয়ার ব্রাজিকে।
গ্রুপ জি
গ্রুপ ফেবারিট বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ড
আসন্ন বিশ্বকাপে জি’ গ্রুপে ফেবারিট বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ড। গ্রুপের বাকী দুটি দল হচ্ছে তিউনিশিয়া এবং প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া পানামা। তবে তারাও বিষ্ময়কর কিছু ঘটাতে পারে।
কেভিন ডি ব্রুইয়ান , এডেন হেজার্ড, এবং রোমেলু লুকাকুকে নিয়ে গঠিত বেলজিয়াম দলটিকে বলা হয় ‘গোল্ডেন জেনারেশন’। তারা মাঠের লড়াইয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যোগ্য দল হিসেবেই চার বছর আগের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল বেলজিয়াম। কিন্তু ইউরো ২০১৬ আসরের শেষ আট থেকে বিদায় নেবার কারণে বরখাস্ত হয়েছেন কোচ মার্ক উইলমটস। পরিবর্তিত হিসেবে বিষ্ময়করভাবে নিয়োগ পেয়েছেন এভারটনের সাবেক বস রবার্তো মার্টিনেজ।
বাছাই পর্বে মার্টিনেজের এই দলটি ছিল দুর্দান্ত। তবে মেধাবিদের নিয়েও মুল পর্বে কোচ আধিপত্য বজায় রাখতে পারবেন কিনা সেটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। মিডফিল্ডার রাজা নাইঙ্গুলানকে দলে না রাখার সিদ্ধান্তটি মেনে নিতে পারেনি দেশটির সমর্থকরা।
বিশ্বকাপে লাল জার্সির দলটির সেরা সাফল্য হচ্ছে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে পৌঁছানো।
এদিকে সর্বশেষ দুটি বড় আসরে শেষ আটে পৌঁছাতে না পারলেও এবারের টুর্নামেন্ট ভাল করার প্রত্যাশা করছে ইংল্যান্ড। টুর্নামেন্টে অধিনায়ক হ্যারি কেনের দক্ষতার উপর নির্ভর করছে সাউথ গেটের অধিনস্ত দলটির অগ্রযাত্রা।
তারুণ্য নির্ভর ইংলিশ স্কোয়াডের আক্রমনভাগ মেধাবীতে পরিপুর্ন। তবে কোচের পছন্দের মধ্যমাঠে ঘাটতি আছে।
১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপে একটি ম্যাচ জয় করা তিউনিশিয়ার জন্য এবারের আসর শুরুর আগেই এসেছে দু:সংবাদ। দলের তারকা ফুটবলার ইউসেফ এমসাকনি হাঁটুর লিগামেন্ট ইনজুরিতে পাড়েছেন। যে কারণে তাকে বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে সুপার স্টার লিওনেল মেসিকে ছাড়া আর্জেন্টিনার রাশিয়া বিশ্বকাপে গমনের সঙ্গে তুলনা করেছেন কোচ নাবিল মালুল।
টুর্নামেন্টের র‌্যাংকিংয়ে ১০০০ ভাগের একভাগ যোগ্যতা সম্পন্ন পানামার রাশিয়া বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন কারাটাই একটি বিষ্ময়। বাছাইপর্বে যুক্তরাস্ট্রের মত শক্তিশালী দলকে টপকে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যত অর্জন করেছে পানামা। অথচ গত মার্চে এক প্রীতি ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের কাছে ৬-০ গোলে পরাজিত হয়েছে কনকাকাফ অঞ্চলের বেশ কয়টি শক্তিশালী দলকে টফকে রাশিয়ার টিকিট লাভ করা দলটি।
গ্রুপ এইচ
তারকা দ্যুতি ছড়াবেন লিওনদোস্কি ও হামেস
অন্য কোন হাই প্রোফাইল নাম না থাকার কারণে এইচ গ্রুপের সবগুলো দলের জন্যই উন্মুক্ত থাকতে পাাে দ্বিতীয় রাউন্ড। তবে পোল্যান্ড ও কলম্বিয়ার বিষয়ে আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন রয়েছে।
গত ডিসেম্বরে বিশ্বকাপের ড্র’’র সময়েই স্বাগতিক দলের বাইরে উপস্থিত থাকা তারকাদের মধ্যে আলো ছড়িয়েছেন পোলিশ তারকা রবার্ট লিওনদোস্কি। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গ্রুপ সেরা হিসেবেই রাশিয়ার টিকিট নিশ্চিত করেছে পোল্যান্ড। এ সময় তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল ডেনমার্ক। ২০১৬ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট পোল্যান্ড এবার রাশিয়া বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে সেই ডেনমার্ককেই পাওয়ার আশা করছে।
বায়ার্ন মিউনিখ স্ট্রাইকার লিওনদোস্কি , জুভেন্টাসের গোল রক্ষক ওজচিয়েছ সজেকজেন্সি, বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের রাইট ব্যাক লুকাজ পিসজকজেক এবং নেপোলির স্ট্রাইকার আরকাদিউজ মিলিক কে নিয়ে একটি শক্তিশালী স্কোয়াড পেয়েছে পোল্যান্ড। যাদের গ্রুপ পর্ব পেরুনোর মত যথেষ্ঠ শক্তি রয়েছে।
গ্রুপের আরেক দল কলম্বিয়াও চার বছর আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপের মত মনোমুগ্ধকর দক্ষতা প্রদর্শনের লক্ষ্য স্থির করেছে। ২০১৪ বিশ্বকাপের শেষ আটে পৌঁছেছিল তারা। যে আসরের শীর্ষ তারকাদের আসনে জায়গা করে নিয়েছিলেন হামেস রড্রিগুয়েজ। হাঁটুর ইনজুরির কারনে চার বছর আগের টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়া কলম্বিয়ার আরেক তারকা রাদামেল ফ্যালকাও ও এখন সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে দলীয় আক্রমনের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।
আগামী ১৯ জুন সারানস্কে জাপানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে কলম্বিয়া। ওই ম্যাচে জাপান কোন চেহারা নিয়ে আবির্ভুত হয় সেটি আগে থেকে সঠিকভাবে ধারনা করা কঠিন। টানা ষষ্ঠবারের মত ব্লু সামুরাইদের বিশ্বকাপের চুড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত হবার পর বিতর্কিত ভাবে বরখাস্ত করা হয় কোচ ভাহিদ হালিরহজিককে। পরিবর্তে ওই আসনে নিযুক্তি পান গাম্বা ওসাকার সাবেক কোচ আকিরা নিশিনো। ঘরোয়া ও ইউরোপীয় ক্লাবের খেলোয়াড়দের সংমিশ্রনে গঠন করা হয়েছে জাপানী দলটি।
এ দিকে গ্রুপের আরেক দল সেনেগালও স্বপ্ন দেখছে ২০০২ আসরের মত কিছু একটা করতে। সে বছর টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার পাইনালে পৌঁছানো আফ্রিকান দলটি এর পর এই প্রথম আবার বিশ্বকাপের চুড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। আসরে মেধাবী একটি স্কোয়াড নিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে আলিও সিজের দলটি। যে দলের আক্রমনভাগের নেতৃত্বে আছেন লিভারপুলের ফরোয়ার্ড সাদিও মানে।
বাসস/এএফপি/এমএইচসি/স্বব