বাজিস-১ : চট্টগ্রামে জব্বারের বলীখেলার ১১০ তম আসর বসছে বৃহস্পতিবার

116

বাজিস-১
জব্বারের বলীখেলা-১১০ তম আসর
চট্টগ্রামে জব্বারের বলীখেলার ১১০ তম আসর বসছে বৃহস্পতিবার
চট্টগ্রাম, এপ্রিল ২৪, ২০১৯ (বাসস) : নগরীতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী লোকক্রীড়া আবদুল জব্বারের বলীখেলার ১১০ তম আসর।
এ উপলক্ষে তৈরী করা হয়েছে বালুর টার্ফসহ সার্বিক প্রস্তুতি। এবারো বলী খেলাকে ঘিরে আজ থেকে বসেছে ৩ দিনের গ্রামীণ লোকজ মেলা। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কুস্তির এই আয়োজন এরই মধ্যে পেরিয়েছে ১০৯ বছর।
বৃহস্পতিবার এ বলীখেলার উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।
খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণ করবেন প্রধান অতিথি সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এবার খেলার স্পন্সর হচ্ছে গ্রামীণ ফোন।
মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল জানান, বরাবরের মতো এবারও বলী খেলার প্রস্তুতি চলছে লালদিঘী ময়দানে। মাঠের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে প্রায় ২০ ফুট বাই ২০ ফুট চতুর্ভুজ আকৃতির বলী খেলার মঞ্চ। মাটি থেকে প্রায় ৫ ফুট উপরে বালি দিয়ে তৈরি করা হয় এ মঞ্চ। মঞ্চের চারিদিকে রশি দিয়ে ঘিরে দেয়া হবে। সেখানে শক্তি মত্তার লড়াইয়ে নামবেন কুস্তিগীররা।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত আবেদন করেছেন বিভিন্ন জেলার শতাধিক বলী। যেখান থেকে মূল পর্বের জন্য বাছাই করা হবে ৫০ জন। বলী খেলায় রেফারির দায়িত্ব পালন করবেন সাবেক ফুটবলার ও সাবেক কাউন্সিলর এম এ মালেক।
জব্বারের বলী খেলাকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছেন আয়োজকরা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে এ ব্যাপারে উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, এবারের বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন পাবে প্রাইজমানি ২০ হাজার টাকা ও ট্রফি এবং রানার্স আপ ১৫ হাজার টাকা ও ট্রফি পাবে। এছাড়া প্রথম রাউন্ডের বিজয়ী ৪০ জন বলীর প্রত্যেকে এক হাজার টাকা ও ট্রফি পাবেন।
বলীখেলার মূল পর্ব হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। আজ বুধবার দুপুরে লালদিঘী এলাকায় দেখা যায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হরেক পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন বিক্রেতারা। মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র লালদিঘী এলাকায় এ মেলাকে ঘিরে এখন চলছে উৎসবের আমেজ। শুরু হয়েছে ৩ দিনের বৈশাখী মেলা।
মেলায় হাতপাখা, ফুলের ঝাড়–, দা, বটি, ছুরি, পিঠা তৈরির পিঁড়ি, বেলচা, কারুকার্যখচিত মাটির ব্যাংক, ফুলের টব, ফুলদানী, শোপিচ, শীতল পাটি, গাছের চারা, বাঁশ ও বেতের তৈরি মোড়া, বাচ্চাদের খেলনা, বাঁশি, মুড়ি-মুড়কি, ফলমূল আর গহনা পাওয়া যাচ্ছে।
আরো আছে চুড়ি-ফিতা, রঙিন সুতা, হাতের কাঁকন, নাকের নোলক, ঢোল, কাঠের তৈরি পুতুল, নকশী কাঁথা, খাঁচায় পোষা পাখি ও মাটির কলস। ইতোমধ্যে ফুল ও ফলজ গাছ নিয়ে এসেছে অনেক নার্সারী, সঙ্গে রয়েছে মাটির টব, গাছের সার ও বীজ। বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষ সারাবছর অপেক্ষায় থাকেন এই মেলার জন্য। তারা বছরের গৃহস্থালি সামগ্রী এই মেলা থেকে সংগ্রহ করেন।
কে সি দে রোডে মাটির তৈরি ব্যাংক-খেলনার সামগ্রী নিয়ে এসেছেন টাঙ্গাইলের কালিগঞ্জ এলাকার কামাল উদ্দিন, তিনি বলেন, ‘আমার বাবা-দাদারাও মাটির জিনিস বানাতেন। এটা আমাদের পারিবারিক ব্যবসা। আমাদের মাটির তৈরি জিনিস বিভিন্ন মেলায়, দোকানে সরবরাহ করি। চট্টগ্রামের বলীখেলার মেলায় প্রতিবছর আমরা নিজেরাই আসি।’
কুমিল্লা থেকে মাটির তৈরি নানা পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছেন আকবর খাঁন। তিনি বলেন, ‘২০ বছর ধরে জব্বারের বলীখেলা উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখী মেলায় আসছি। এবারও ঘর সাজানোর মাটির তৈরি নানা পণ্য নিয়ে এসেছি। ক্রেতাদের অপেক্ষায় আছি।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘কুস্তি’ বলীখেলা নামে পরিচিতি। ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বাঙালিদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য নগরীর বদরপাতি এলাকার আবদুল জব্বার সওদাগর লালদীঘি মাঠে সর্বপ্রথম বলীখেলার সূচনা করেছিলেন।
তার মৃত্যুর পর এ প্রতিযোগিতা জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতিবছর ১২ বৈশাখ নগরের লালদীঘি মাঠে এ বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ বলীখেলাকে ঘিরে প্রতি বছরই তিন দিনের মেলা বসে। মেলায় নিত্য প্রয়োজনীয় রকমারী পণ্যের পসরা নিয়ে আসেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।
আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, ‘ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলার ১১০তম আসরের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আশা করছি সবার সহযোগিতায় একটি সুন্দর ও সফল বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা আমরা উপহার দিতে পারবো চট্টগ্রামবাসীকে।’
বাসস/জিই/এসকেবি/১৬১০/এমকে