কর্মসংস্থান সহায়ক প্রবৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে : আইএফসি-ইআরএফ যৌথ কর্মশালায় বক্তারা

716

ঢাকা, ২১ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি যেভাবে বাড়ছে, কর্মসংস্থান সেভাবে বাড়ছে না। তাই আগামীতে কর্মসংস্থান সহায়ক প্রবৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে।
রোববার অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) যৌথভাবে আয়োজিত কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত এই কর্মশালার বিষয় বস্তু ছিল ‘ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন মেজারস্ ইন বাংলাদেশ’।
ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলালের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইএফসির সিনিয়র ইকোনমিস্ট ড. মাসরুর রিয়াজ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য খোন্দকার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান, বিশ^ব্যাংকের বেসরকারি খাত বিশেষজ্ঞ নুসরাত নাহিদ বাবি, এনবিআরের কাস্টমস মর্ডানাইজেশন অ্যান্ড প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের প্রথম সচিব মো. গিয়াস কামাল এবং ইউকে এইডের প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজর মুশফিক ইবনে আকবর।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কর্মশালাটি আগামীতে কয়েকটি পর্বে এটি চলবে। দ্বিতীয় পর্বের বিষয় বস্তু হচ্ছে দেশের বাণিজ্য নীতি। এছাড়াও অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা হবে এই কর্মশালায়।
ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের (জনসংখ্যার বোনাসকাল) মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিবছর বাংলাদেশে ২০ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে আসছে। কিন্তু সেভাবে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। ফলে কর্মসংস্থান তৈরি হয়, এমন শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা কর্মসংস্থান বাড়াতে না পারলে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট দায় হয়ে দাড়াঁবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো আরও বেশি গতিতে এগুচ্ছে। একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় হলো বাংলাদেশে যেসব দেশী বিদেশী বিনিয়োগ আসছে, সেগুলো ধরে রাখতে পেরেছে। কিন্তু নতুন বিনিয়োগ বাড়ছে না। প্রতিবছর ১ থেকে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরারসি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসছে, কিন্তু এর অধিকাংশই পুণঃবিনিয়োগ। নতুন বিনিয়োগ আসছে না। রফতানি বেড়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের মতো জনসংখ্যার দেশে আরও বৃদ্ধি জরুরি।
মাসরুর রিয়াজ বলেন, ইআরএফ সদস্যদের সঙ্গে এই ধরনের কর্মশালা অব্যাহতভাবে চলবে। কারণ, এর ফলে আইএফসি এবং ইআরএফ উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্ক বাড়বে। পাশাপাশি ইআরএফ সদস্যদের দক্ষতা বাড়বে। এতে আইএফসিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই মানুষের কাছে তাদের কর্মসূচির বার্তা পৌঁছাতে পারবে।
খোন্দকার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা সহজ করতে কাজ করছে সরকার। কাস্টমস থেকে কত সহজে পণ্য খালাস করা যায়, সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। আমাদের প্রত্যাশা দ্রুত এ কাজে সফলতা আসবে।
আবুল কাশেম খান বলেন, সহজে ব্যবসা করার সুচকে অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিশ^ব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস রিপোর্টে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। কিন্ত ২০০৫-২০০৬ সালে ছিল ৬৫তম। বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ার কারণ হল আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো দ্রুত গতিতে সামনে এগিয়েছে। অথচ জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ সবকিছুতেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হচ্ছে। এরপরও মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের আরও আগানো দরকার। কারণ, আমাদের প্রতিযোগীরা বেশি গতিতে এগুচ্ছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আশে পাশের দেশগুলোর মধ্যে বন্দরের জটিলতায় সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশে আমদানি করা পণ্য কাস্টমসে খালাস করতে ৩৬০ ঘন্টা সময় লাগে। আর রফতানি করা পণ্য জাহাজীকরণে সময় লাগে ৩১৫ ঘন্টা। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়াতে আমদানি পণ্য ৭ ঘন্টা এবং রফতানি পণ্য জাহাজীকরণে মাত্র ১৪ ঘন্টা সময় লাগে। ভিয়েতনামে আমদানিতে ১৩২ এবং রফতানিতে ১০৫ ঘন্টা সময় লাগে। তারা বলেন, পণ্য আমদানি রফতানির অনুমোদনে মোট ৩৯টি সংস্থা রয়েছে। প্রতিটি আমদানি রফতানিতে গড়ে ৭ থেকে ৮টি সংস্থার অনুমোদন লাগে। এগুলোর প্রক্রিয়া দীর্ঘ। ফলে বন্দরে অনেক বেশি সময় লাগে।
সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, সদস্যদের দক্ষতা বাড়াতে ইআরএফের এই ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এ সময়ে কর্মশালায় সহায়তায় করায় আইএফসি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
রাশিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বিশ^ বাণিজ্য অত্যন্ত গুরুত্ব বিষয়। কারণ, বাংলাদেশ মোট অর্থনীতির বড় অংশই বিশ^ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এই বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে কর্মশালার বিষয় বস্তু নির্ধারণ করা হয়। তিনি জানান, আজ এ সংক্রান্ত কর্মশালার উদ্বোধন হলো। এরপর আইএফসির সঙ্গে যৌথভাবে আরও ৪টি কর্মশালা করবে ইআরএফ।
কর্মশালায় ইআরএফের ৮০ জন সদস্য অংশ নিয়েছেন। চার ঘন্টা ব্যাপি এ কর্মশালায় দেশের অর্থনীতি, বহুপাক্ষিক বাণিজ্য এবং কাস্টমসের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।