ভোলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’র আওতায় সোয়া লাখ মানুষ উপকৃত হচ্ছে

237

॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ১৭ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : জেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় প্রায় সোয়া লাখ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। জেলার ৭ উপজেলায় সমাজসেবা অফিস ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ১ লাখ ২১ হাজার ৪০৭ জন মানুষ বিশেষ এ উদ্যোগের সুবিধার আওতায় এসেছে। এর মধ্যে সমাজসেবা অধিদফতর থেকে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া হয় ৮৫ হাজার ৮২৯ জনকে।
এছাড়া ৩৩ হাজার ৬১৮ জনকে কর্মজীবী ল্যাকটিং মাদার ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতির মাধ্যমে উপকারভোগী, ভিজিডি সুবিধা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সহায়তা দিচ্ছে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়। ফলে সামাজিকভাবে অবহেলিত ও অসহায় বিশাল এ জনগোষ্ঠী জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। তাই পূর্বের দূরবস্থা কাটিয়ে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি পেয়ে হাসি ফুটেছে এসব মানুষের মুখে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক বাসস’কে জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এ উদ্যোগ সামাজে খুবই ইতিবাচক ভ’মিকা রাখছে। ভাতার অর্থের মাধ্যমে অসহায় জনগোষ্ঠির দৈনন্দিন জীবনের অতি জরুরি বিষয়গুলো পূরণ করা হচ্ছে। একইসাথে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে তাদেরকে অংশগ্রহণ করানো হচ্ছে। এক কথায় ভাতাভোগীদের সাথে সরকারের একটা সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। ফলে তারা আর নিজেদেও দূর্বল মনে করছেনা। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কল্যাণে অবস্থার পরিবর্তন, নিরাপত্তাবোধ ও আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে।
সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বাসস’কে বলেন, সমাজসেবা থেকে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পান ১ হাজার ৪৬৭জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। প্রত্যেককে মাসে ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। মাসিক ৫০০ টাকা হারে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয় ৫০ হাজার ৮৬২জন অসহায় বয়স্কদের মাঝে। তিনি বলেন, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা পান ২১ হাজার ৬৭১জন অসহায় নারী। প্রত্যেকের মাসে ৫০০ টাকা করে নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা হয় টাকা। একইভাবে প্রতিবন্ধীদের মাসে ৭০০ টাকা করে মোট ১১ হাজার ২৩৫জনকে দেওয়া হয়। আর প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তির মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা করা হয় ৫৯৪ জনকে।
অন্যদিকে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মজীবী ল্যাকটিং মাদার ভাতা দেওয়া হয় ২ হাজার ১৭০ জন নারীকে। টানা ২ বছর পর্যন্ত মাসিক ৫০০ টাকা হারে এই ভাতা দেওয়া হয়। গ্রামীণ সমাজের অসহায় ও দরিদ্র ৭ হাজার ৪১২জন নারীকে মাসিক ৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে মাতৃত্বকালীন ভাতা। ১৭৭টি স্বেচ্ছাসেবী নারী সমিতির মাধ্যমে উপকার পেয়েছে ৮ হাজার ৮৫০ জন। এই সমিতির মাধ্যমে সামাজিক বিভিন্ন সচেতনতাসহ প্রশিক্ষণের প্রদান ও আর্থিকভাবে উপকৃত করা হয় সদস্যদের। ভিজিডি’র ৩০ কেজি করে চাল সহায়তা পাচ্ছে ১৭ হাজার ৩৬ জন ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ১১০জনকে।
সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দরিদ্র দিনমজুর জাহাঙ্গির। মা, বাবা, ছোট বোন ও স্ত্রী জান্নাত বেগমকে নিয়ে সংসার। স্ত্রী জান্নাত বেগম সন্তান সম্ভবা, তাই মাতৃত্বকালীন ভাতায় স্ত্রীকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াচ্ছেন। জাহাঙ্গির বলেন, আমরা গরিব মানুষ। বাড়তি টাকা দিয়ে স্ত্রীর জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো সম্ভব নয়। তাই সরকারি টাকায় স্ত্রীকে বিভিন্ন খাবার কিনে দিচ্ছেন। ধনীয়া ইউনিয়নের বৃদ্ধ আব্দুল খালেক (৬৮) বলেন, তিনি ছেলে সংসারে থাকেন। বয়স্ক ভাতার টাকায় তার ওষুধ কিনতে হয়। তাই এ টাকায় তার অনেক উপকার হয়। শুধু দিনমজুর জাহাঙ্গির ও বৃদ্ধ আব্দুল খালেক নয়, আরো অনেকেই বিভিন্ন ভাতার টাকায় উপকৃত হচ্ছেন।
জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো: ইকবাল হোসেন (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বাসস’কে জানান, জেলায় এ বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় সোয়া লাখ মানুষ সরাসরি উপকার পেলেও পরোক্ষভাবে আরো ৩/৪ লাখ মানুষ সুবিধা পাচ্ছে। অর্থাৎ যিনি মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা ১০ হাজার টাকা পান, শুধু ভাতাভোগীই নয় এ টাকায় তার স্ত্রী-সন্তানরাও উপকৃত হচ্ছে। এমনি করে প্রত্যেক ভাতার টাকায় পরিবারের অন্যন্য সদস্যরা সুফল পাচ্ছেন। বিশেষ করে সমাজের দরিদ্র পরিবারগুলোর কাছে বিভিন্ন ভাতার টাকা অর্শিবাদ হয়ে দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট সমাজসেবক ও চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মো: সফিকুল ইসলাম মনে করেন, বর্তমান সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে সমাজের চরম দরিদ্র ও সর্বাধিক ঝুঁকিগ্রস্তদের অগ্রাধিকার দিয়ে এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মাধ্যমে সামাজিকভাবে অবহেলিত মানুষগুলো সরকারি সহায়তা দিয়ে ঘুরে দঁড়িয়েছে। তারা আর পূর্বের সেই হতদরিদ্র অবস্থায় নেই। বিভিন্ন ভাতার মাধ্যমে দিন দিন জীবনমান উন্নয়ন হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদে পরিণত হচ্ছে তারা। তাই এ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড আগামী দিনে বজায় রাখার জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।