ডিসেম্বরে মধ্যে বিনিয়োগের উপযোগী হবে সিলেট হাইটেক পার্ক

1286

সিলেট, ১২ এপ্রিল ২০১৯ (বাসস) : ‘সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে ১৬২ একর জমিতে গড়ে তোলা হাইটেক পার্ক ‘সিলেট ইলেকট্রনিক সিটি’ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেটে হাইটেক পার্ক বিষয়ক এক কর্মশালায় এ তথ্য জানান প্রকল্পের পরিচালক মো. গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া।
তিনি জানিয়েছেন, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে গড়ে উঠা দেশের অন্যতম বৃহৎ হাইটেক পার্ক ‘সিলেট ইলেকট্রনিক্স সিটি’র কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। মৌলিক অবকাঠামোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
ওয়ানস্টপ সার্ভিসের আওতায় বিনিয়োগকারীদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এই হাইটেক পার্কে অন্তত ৫০ হাজার দক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে। দেশী এবং প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের এই ইলেকট্রনিক্স সিটিতে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।
চেম্বার কনফারেন্স হলে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ও বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের নিয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সিলেট চেম্বারের সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদের সভাপতিত্বে সভায় প্রকল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম ও কল্যাণ কুমার সরকার।
প্রকল্প পরিচালক ব্যারিস্টার সরওয়ার তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সরাসরি নির্দেশনায় প্রকল্পটি দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করে বিনিয়োগের জন্য প্রকল্পটি বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি জানান, ২২ ফুট গভীর ১৬৭ একর প্রকল্পের ভূমিটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে সাইট অফিস, প্রশাসনিক ভবন, দৃষ্টিনন্দন আইসিটি বিজনেস সেন্টার, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের কাজ চলছে। নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ব্রীজ এবং বিগত ৫০ বছরের অবস্থা পর্যালোচনাক্রমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখানে স্থাপন করা হচ্ছে বিদ্যুতের সাব-স্টেশন এবং গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আরো কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ শেষ হয়ে যাবে। তিনি জানান, আগামী মাসের পরেই গাড়ি নিয়ে প্রকল্প এলাকায় যাওয়া যাবে। প্রকল্পের জন্য ৩৬ লক্ষ ঘনফুট মাটির মধ্যে ৩১ লক্ষ ঘনফুট মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প এলাকাটি সিলেট এয়ারপোর্ট থেকে ১২ কি.মি. এবং রেলওয়ে স্টেশন থেকে ২২ কি.মি. দূরে।
কর্মশালায় জানানো হয়, সিলেট ইলেকট্রনিক্স সিটিতে ৪০ বছর মেয়াদী প্লট লীজ দেওয়া হবে। প্রতি স্কয়ার মিটার ভূমির ভাড়া হবে ১.৫ ডলার প্রতি বছর। এছাড়া ৩১ হাজার স্কয়ার মিটার স্পেস বিনিয়োগকারীদের ভাড়া দেওয়া হবে। বিনিয়োগকারীরা ট্যাক্স হলিডেসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারবেন। কোন ছাড়পত্রের জন্য কোন দপ্তরে দৌঁড়াতে হবে না। ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে ১৪৮টি সেবা প্রদান করা হবে। যতরকম সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন হবে তা সরকারই করে দেবে, তবে কোম্পানী গঠনের পর তা অন্য কারো কাছে হস্তান্তর করা যাবে না। তিনি জানান, আইসিটি হচ্ছে বিশ্বের শেষ রেভ্যুলিউশন। দেশে এবং বিদেশে সিলেট ইলেক্ট্রনিক্স সিটিতে বিনিয়োগের জন্য ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে সিলেট চেম্বারকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তিনি আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে চেম্বার সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে সিলেটে গড়ে তোলা হচ্ছে সুবিশাল হাই-টেক পার্ক সিলেট ইলেক্ট্রনিক্স সিটি। সরকার নিজ উদ্যোগে সম্পূর্ণভাবে অবকাঠামো তৈরী করে বিনিয়োগকারীদের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার খুবই আন্তরিক। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি সিলেট চেম্বারের উদ্যোগে দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করে উদ্যোক্তাদের অবহিত করা হয়েছে। প্রবাসীরা বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন সিরাজুল ইসলাম বাদশা, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট চেম্বারের পরিচালক জিয়াউল হক, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শরফুদ্দিন, আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলীমুল এহছান চৌধুরী, ট্রেড সিলেটের সিইও মো. ফখরুজ্জামান প্রমুখ।