মুখরিত হয়ে উঠেছে কেরানীগঞ্জের পাঞ্জাবির পাইকারি বাজার

649

কেরানীগঞ্জ, ৯ জুন, ২০১৮ (বাসস) : ঈদে ছেলেদের পোশাকের মধ্যে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে পাঞ্জাবি। খুচরা বাজারে পাঞ্জাবি বিক্রির পাশাপাশি কেরাণীগঞ্জের পাঞ্জাবির পাইকারি বাজারে এখনও পাইকারদের বেশ ভিড় দেখা গেছে। এখানকার দোকান মালিকরা জানান শবেবরাতের পর থেকেই পাইকারি বাজারে বেশ বিক্রি হচ্ছে। তাদেরমতে সারাদেশের পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে কেরাণীগঞ্জের বেশ কয়েকটি পাঞ্জাবির পাইকারি বাজার । বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দেশের মোট পাঞ্জাবির চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই সরবরাহ করে থাকে কেরাণীগঞ্জের বিভিন্ন মার্কেট থেকে।
এখানকার পাঞ্জাবি বিক্রেতাদের মতে রাজধানীসহ সারা দেশের অভিজাত বিপনিবিতান থেকে ফুটপাতের মার্কেট দখল করে নিয়েছে কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর ও কালীগঞ্জের বাহারী পাঞ্জাবি। দামে কম ও কাপড়ের গুনগতমান থাকায় ক্রেতারা লুফে নিচ্ছেন এ অঞ্চলের তৈরি পাঞ্জাবি। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে নির্ঘুমরাত কাটাচ্ছেন দর্জিরা। যদিও বছর জুড়েই চলে পাঞ্জাবি তৈরির কাজ তবে ঈদ এলেই কারিগরদের হতে হয় গলদঘর্ম। কমকরে হলেও এবারের ঈদ বাজারে ৭ কোটি পাঞ্জাবি সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাক মালিকরা।
কালিগঞ্জ , আগানগর ও শুভাঢ্যার বিভিন্ন কারখানায় ঘুরে দেখা গেছে পাঞ্জাবি তৈরির ধুম । রাত জেগে চলছে চোষা,রাজশাহি সিল্ক ,বটিক,বাংলালিংক,তসর কাপড়সহ বাহারী ঢংয়ের ফ্যাশনেবল পাঞ্জাবি তৈরির কাজ। ১শ’ টাকা থেকে শুরু করে কালিগঞ্জের মার্কের্টে মিলছে ২-৩ হাজার টাকা মূল্যের ফ্যাশনেবল পাঞ্জাবি। একদশক আগে দেশের পাঞ্জাবির বাজার ভারত ও পাকিস্তানের দখল থাকলে এখন আর সেই অবস্থায় নেই। ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এখন দেশেই উন্নতমানের পাঞ্জাবি তৈরি হওয়ায় ও দাম ক্রেতাদের নাগালে থাকায় দিনের পর দিন বাড়ছে এ এলাকার তৈরি পাঞ্জাবির চাহিদা জানালেন শুভরাজ গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী ইব্রাহিম খলিল। তিনি আরো জানান সারাদেশে এখানকার পাঞ্জাবির ব্যপক চাহিদা থাকা সত্বেও আমরা পুরোপুরি ভাবে সেই চাহিদা মেটাতে পারছিনা। তবে চাহিদার অর্ধেক মেটানো সম্ভব হয় এখান থেকে। যার কারণে এখনও পাইকারদের পদচারানায় মুখরিত রয়েছে তৈরি পোশাকের বাজার। ১শ’ টাকা থেকে শুরু করে কালিগঞ্জের মার্কের্টে মিলছে ২-৩ হাজার টাকা মূল্যের যে ফ্যাশনেবল পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে তাই পাইকাররা খুচরা ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করছে দিগুনদামে।
পূর্ব আগানগর জেলা পরিষদ মার্কেটের মুসলিম কালেকশনের মালিক ও প্রধান ডিজাইনার মো. মুসলিম ঢালী জানান,সেলাইয়ের বিভিন্ন নকশার মাধ্যমে মুসলিম কালেকশনের পাঞ্জাবিতে রয়েছে বিশেষত্ব ও নতুনত্ব। লাল,কফি,বেগুনি,কমলা,জলপাই সবুজের পাশাপাশি হালকা আকাশি,সাদা,অফ হোয়াইট,পিংক,ধুসর ইত্যাদি রং ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন এবছর পাঞ্জাবিতে উজ্জল রঙের প্রধান্য রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ইষ্টার্ণ এবং ওয়েষ্টার্ণ কার্ট ডিজাইনের সংমিশ্রন।
কথাহয় আলম সুপার মার্কেটের গ্রুভী পাঞ্জাবির মালিক মো. জহির উদ্দিনের সাথে অত্র এলাকায় তাদের তিনটি শোরুম রয়েছে। ৬৫০ টাকা থেকে ২০০০টাকা মূল্যের পাঞ্জাবি রয়েছে তাদের শোরুমে। যা রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমলে অনেক বেশী দামে বিক্রি হয়ে থাকে। তিনি বলেন রং আর ডিজাইনের দিকে খেয়াল রেখে আমরা একটু ভিন্ন ষ্টাইলের পাঞ্জাবী বাজারজাত করে থাকি। ঠিক একই ধরনের মন্তব্য ওই মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী জিলাস গার্মেন্টেসের মালিক হাজী মো. নাজিম উদ্দিনের। তার মতে আমরা বর্তমান সময়ের সাথে রুচিশীলতাকে প্রধান্য দিয়ে পোশাক তৈরি করে থাকি। এ মৌসুমে তাদের বিক্রির টার্গেট প্রায় ২ কোটি টাকা।
ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যমতে, ছোটদের জন্য তৈরি পোশাক ১শ’থেকে ১৫০ টাকা দরের পাঞ্জাবি রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন অভিজাত বিপনিবিতানে বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকায়। বড়দের জন্য তৈরি পোশাক এখানকার বাজারে ৫শ’থেকে ১ হাজার টাকায় পাওয়া গেলেও খুচরা বাজারে সেগুলো পাওয়া যায় দিগুন মূল্যে।
কেরানীগঞ্জ গামেন্টস মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবদুল আজিজ জানান , এবছর ফুলহাতা কম্বাইন্ড , আদি ষ্টাইপ,সুতি পাট্টা , জামদানি , বার্মিজ , গ্রামীণ চেক , সুতি কম্পিউটার ,দেশী হাতের কাজ , স্ক্র¬াব এমব্রডারি পাঞ্জাবি তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ গুলোর চাহিদাও অনেক। শবে বরাতের পর থেকেই বাড়ছে পাইকারী ক্রেতাদের সমাগম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নিরীহ ব্যবসায়ীরা যাতে নির্বিঘেœ কেনা কাটা করতে পারেন সে জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।