বাজিস-২ : হবিগঞ্জে জমে উঠেছে ঈদের বাজার

186

বাজিস-২
হবিগঞ্জ-ঈদ বাজার
হবিগঞ্জে জমে উঠেছে ঈদের বাজার
হবিগঞ্জ, ৯ জুন ২০১৮ (বাসস) : জেলায় জমে উঠেছে ঈদের বাজার। তরুণ-তরুণীরা সকাল থেকেই দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন। বিপণি বিতান ও দোকানগুলোতে বাহারি ডিজাইন আর মডেলের পোশাক শোভা পাচ্ছে। তবে গত বছরের চেয়ে এবারের ঈদের মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্যনীয়। গত বছর হবিগঞ্জ জেলার কৃষি অধ্যুষিত বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ ও লাখাই, নবীগঞ্জের ভাটি অঞ্চলের অকাল বন্যায় ফসলহারা লোকজনের ঈদ মার্কেটে উপস্থিতি কম ছিল। গত বছর নিম্ন আয়ের লোকজনও ঈদের কেনাকাটা করতে পারেননি। এবার হাওর অঞ্চলের কৃষি জমিগুলোতে বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা তাদের জমিনের উৎপাদিত ফলনও ঘরে তুলেছেন। তবে ঈদের কেনাকাটা শুধু ফসলের উপর নির্ভরশীল থাকে না। প্রবাসী, চাকুরিজীবী, ব্যবসার উপার্জিত টাকায় ঈদ বাজার করা হয়। এবছর ঈদকে সামনে রেখে মে মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স আসায় বাজার চাঙ্গা হতে সহায়ত ভূমিকা পালন করেছে।
সরেজমিনে হবিগঞ্জ শহরের ঘাটিয়া বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার মার্কেটগুলোতে দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। অত্যাধুনিক শংকর সিটির শংকর বস্ত্রালয়, এসডি স্টোর, এসডি প্ল¬াজা, মনিহার বস্ত্রালয়, খাজা গার্ডেন সিটিসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবস্থাপকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এখন অনেকে প্রথম রমজানের পর থেকেই ঈদের মার্কেট করে ফেলেন। এর কারণ হলো রমজানের ঈদ যখন সামনে ঘনিয়ে আসে, তখন মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে। এ কারণে অনেকেই ঝামেলা এড়াতে আগেই ঈদের মার্কেটের কাজ শেষ করেন ক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন এখনও মার্কেটগুলোতে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তান, ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য পেশার লোকজনই কেনাকাটা করছেন। চাকুরিজীবীরা বেতন ও ঈদ বোনাস পাওয়ায় কেনাকাটা শুরু করেছেন। নিম্ন আয়ের লোকজনও ঈদের ২দিন পূর্বে ঈদ কেনাকাটা করে থাকেন। এবার ১৫ রমজান থেকে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ রমজান থেকে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। ২৫ রমজানের পর সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দোকানগুলো খোলা থাকছে। তবে ক্রেতারা জানিয়েছেন অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার কাপড়ের দাম বেশি। অপরদিকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার কাপড়ের দাম অনেকটা কম। মার্কেটগুলোতে এখন ক্রেতাদের বেশির ভাগই মহিলা ও তরুণ-তরুণী। আবার অনেক বাবা মা তাদের সন্তানদের পছন্দের জামা কাপড় ক্রয় করতে বাজারে এসেছেন।
এবার ঈদে তরুণী ও যুবতীরা ভারতীয় হিন্দি সিনেমার নামে থ্রি পিসগুলো পছন্দ করে ক্রয় করছেন। ব্যবসায়ীরাও সে হিসেবে রমজান শুরুর মাসখানেক আগ থেকে ভারত থেকে কোটি কোটি টাকার জামা-কাপড় ক্রয় করে এনেছেন। তবে অনেক ক্রেতা আবার ভারতীয় কাপড় ক্রয় করতে আগ্রহী নন। এ ক্ষেত্রে তরুণীরা ভারতীয় কাপড়গুলো পছন্দ করছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন ভারতের কাপড়গুলোর ডিজাইন বাংলাদেশ থেকে অনেক বেশি সুন্দর। এগুলোর ডিজাইন টেলিভিশনের বিভিন্ন সিরিয়ালে দেখানোর কারণেই মহিলাদের আগ্রহ থাকে বেশি। এবার মার্কেটগুলো থেকে তরুণীরা বেশির ভাগই ভারতের ডালিয়া নামে থ্রি পিস ক্রয় করছেন। ডালিয়া প্রতি পিস ৩ হাজার থেকে ১০হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে কাতানের মধ্যে থ্রি পিস গাউন ২হাজার থেকে ৪হাজার ও ৫হাজার টাকা, সিল্ক ২হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা, কামিজ ৪পিস ১৬শ থেকে ৩হাজার টাকা, রাখী থ্রি পিস ২হাজার থেকে ৯হাজার, গর্জিয়াস পার্টি ৪/৫হাজার টাকা, টুপিস সাড়ে ৩হাজার থেকে ৬হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় বাহুবলী, বাহুবলী-২ পানছী, গে¬াসী, সারারা, মাসাকালী, সাগরিকা, পিওনা, ক্রামা, পাখি, ফ্লোরটার্চ, মাসাক্কালি, আশিকী, আনারকলি এবং লং কামিজ। এ ছাড়া হিন্দি সিরিয়াল ও সিনেমার বিভিন্ন নায়িকাদের নামানুসারে থ্রি পিসের চাহিদাও ব্যাপক বলে জানান বিক্রেতারা। বাহুবলী-২ ৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য পোশাকও দুই হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। শাড়ির মধ্যে মুসলিম কাতান ৪ হাজার থেকে ৫হাজার টাকা, কামিজ বরণ ৫হাজার থেকে ৬হাজার, মেঘদূত ৩হাজার থেকে ৪হাজার, বেঙ্গালো পিওর শাড়ি ৮হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোটদের পোশাকেও রয়েছে ভিন্নতা। মেয়ে শিশুদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে লং ফ্রক ও পার্র্টি ফ্রক। এ ছাড়া মার্কেটগুলোতে উঠেছে লেহেঙ্গা ও লং কামিজ। গরমকে সামনে রেখে ছেলে শিশুদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে সুতি টি-শার্ট ও বাবা স্যুট। এ ছাড়া বিভিন্ন ডিজাইনের প্যান্ট। শিশুদের পোশাকের দাম আকাশ ছোঁয়া। ঈদে তরুণদের পোশাকেও রয়েছে ভিন্নতা। তবে প্রতিবারের মতো এবারেও ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবির সমাহার দেখা গেছে দোকানগুলোতে। সিল্কের ব্যবহার করে খাদি পাঞ্জাবির আকর্ষণীয়তা বাড়ানো হচ্ছে। পোশাক ছাড়াও জুতা ও প্রসাধনীর দোকানে ভিড় বাড়ছে। অনেকে পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং জুয়েলারিও কিনে নিচ্ছেন।
চুনারুঘাটের আসামপাড়া বাজারে ব্যবসায়ী শেখ আব্দুল হান্নান বাচ্চু জানান, প্রতি বছর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে হবিগঞ্জ শহরে আসি, এবারও এসেছি। গত বছর যে থ্রি পিস ৩৬শ টাকা দিয়ে নিয়েছি। এবার সে রকম ডিজাইনের থ্রি পিস জামা ৪হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করতে হচ্ছে। এছাড়াও শাড়ি, জামা কাপড় সব কিছু দাম একটু বেড়েছে। এর মধ্যে সাধ্যমত ঈদের কেনাকাটা করছি।
হবিগঞ্জ শহরের বাসিন্দা শিক্ষিকা ইসমত আরা জানান, সব কাপড়ের দোকানগুলোতে ভারতীয় কাপড়ের সয়লাব। এর মধ্যে আমরা দেশীয় শাড়ি কাপড় ক্রয় করছি। তিনি বলেন-আমাদের দেশেই ভাল মানের কাপড় রয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে দেশীয় তৈরি কাপড় পছন্দ করি। এবারের ঈদে দেশীয় কাপড়ই নিতে চাই। কাপড়ের দাম কেমন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য কাপড়ের দাম বেশি। যাদের টাকা বেশি রয়েছে তাদের জন্য কাপড়ের দাম কম। চুনারুঘাটের উত্তর বাজারের ঝুমা আক্তার জানান, প্রতি ঈদেই চুনারুঘাট থেকে হবিগঞ্জ শহরে নিজের ও পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে আসি। এবার জামা কাপড় ক্রয় করেছি। তবে দাম অন্যান্য বছরের চেয়ে একটু বেশিই। তবে কি আর করবো ঈদ বাজার তো করতে হবে। শংকর সিটির শংকর বস্ত্রালয়ের ম্যানেজার সুজিত রায় জানান, ঈদ বাজারের চাহিদা মেটাতে দেশে ও বিদেশী বিভিন্ন মডেল কাপড় পাইকারী ক্রয় করে এনেছি। এর মধ্যে আমাদের এখানে নতুন মডেল বিভিন্ন ধরণের থ্রি পিস এসেছে। ঈদের বাজারে ক্রেতারা এগুলো ক্রয় করছেন। তিনি বলেন- যতই দিন ঘনিয়ে আসছে দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। ক্রেতারা তাদের পছন্দের জিনিস ক্রয় করছেন। দাম অন্যান্য বছরের বেশি কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-অন্যান্য বছরের চেয়ে কাপড়ের দাম অনেকটা কম। ভাল কাপড় নিতে গেলে দাম একটু বেশি দিতেই হবে। এসডি স্টোর ম্যানেজার অর্জুন রায় জানান, আমাদের দোকানে ১৫ রমজান থেকে ক্রেতার ভিড় জমাচ্ছেন। আমরা তাদের পছন্দের জামা-কাপড়, থ্রি পিস, পাজামা, পাঞ্জাবী দিতে পারছি। তার দাবি এ বছরের কাপড়ের দাম তেমন একটি বাড়েনি।
ব্যবসায়ীরা জানান, হবিগঞ্জ জেলা অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। গ্রাম অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ ধান বিক্রি করে ঈদের জামা-কাপড় ক্রয় করেন। এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ হিসেবে দিন দিন ঈদ মার্কেটগুলোতে লোকজনের সমাগম বাড়বে।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ জানান, ঈদ সামনে রেখে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। মার্কেট ও রাস্তায় জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা।
বাসস/সংবাদদাতা/কেইউ/১০৫৩/নূসী