দমকল কর্মী সোহেল রানার জানাজা অনুষ্ঠিত

173

ঢাকা, ৯ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : রাজধানীর কুর্মিটোলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনীর দমকল কর্মী সোহেল রানার নামাজে জানাজা আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোহেল রানার (৩৪) মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে গতরাতে দেশে আনা হয়। সম্প্রতি বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের উদ্ধার তৎপরতা চালানোর সময় সোহেল রানা আহত হন।
নামাজে জানাজায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন, সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খান, দি লাইফ সেভিং ফোর্স সদর দফতরের পরিচালক (অপস অ্যান্ড মেইনটেইন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ, পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইব্রাহীম খান প্রমুখ শরীক হন। এসময় নিহতের পরিবারের সদস্য এবং অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানাজা শেষে সোহেল রানার মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনায় পাঠানো হয়েছে। সেখানে বিকেলে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে রানার লাশ দাফন করার কথা রয়েছে।
দি লাইফ সেভিং ফোর্স সদর দফতরের পরিচালক (অপস অ্যান্ড মেইনটেইন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বাসস’কে জানান, আজ বেলা সোয়া ১১টায় ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরে সোহেল রানার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিউগলের সুর বাজিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পতাকায় মোড়ানো সোহেল রানার কফিনে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ফায়ার সার্ভিসের একটি চৌকস দল। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার জানানো হয়।
এর আগে সকালে সিএমইএচ হিমঘর থেকে ফায়ারম্যান সোহেল রানার মরদেহ সিদ্দিক বাজারে ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরে আনা হয়। কিছুক্ষণের জন্য সহকর্মীদের সোহেলের মুখখানি শেষবারের মতো দেখানো হয়। এসময় সহকর্মীদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। সোহেল রানার সহকর্মীরা তাকে চোখের জলে শেষ বারের মতো চিরবিদায় জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা সোহেল রানার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতের চেষ্টা করেছি। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
সোমবার দিবাগত রাতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে সোহেল রানার মরদেহ ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়।
দি লাইফ সেভিং ফোর্স সদর দপ্তর সুত্রে জানায়, সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৭ মিনিট) সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন সোহেল রানা।
গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ২৬ জন নিহত এবং ৭১ জন আহত হন। ওইদিন এফআর টাওয়ারে আগুন নেভানো ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে কাজে অংশ নিয়েছিলেন ফায়ারম্যান সোহেল রানা। তখন ভবনে আটকে পড়া চার-পাঁচজনকে উদ্ধার করে একসঙ্গে নিচে নামানোর সময় উঁচু ল্যাডারটি (মই) ওভারলোড দেখাচ্ছিল। ওভারলোড হলে সাধারণত ল্যাডার নিচে নামে না, স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক হয়ে যায়। তাই ল্যাডারের ওজন কমাতে সোহেল নিজেই ল্যাডার বেয়ে নিচে নামছিলেন। ল্যাডারের ওজন কমায় সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যায়। এতে তার একটি পা ল্যাডারের ভেতরে ঢুকে যায়। এছাড়া তার শরীরের সেফটি বেল্টটি ল্যাডারে আটকে পেটে প্রচন্ড চাপ লাগে। এরপর থেকে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন তরুণ ফায়ারম্যান সোহেল রানা। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার চিকিৎসা চলে। পরে সোহেল রানাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত ৫ এপ্রিল ফায়ারম্যান সোহেল রানাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।