চাঁদপুরে গ্রাম আদালতের সুফল পেতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ

275

চাঁদপুর, ৯ এপ্রিল ২০১৯ (বাসস) : জেলার গ্রাম আদালত সক্রিয়করণের ফলে এর সুফল পেতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে এর সুফল। চাঁদপুরে গ্রাম আদালতে মামলা গ্রহণ এবং নিষ্পত্তির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে।
চাঁদপুরে গ্রাম আদালতকে সক্রিয় করনের জন্য গত দুই বছর যাবত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদেরকে আদালত পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেওা হয়, এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি এনজিও সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে তাদের দায়িত্ব ও সহযোগিতা করার জন্য সেমিনারের ব্যবস্থা করা হয়। এখন সকলের সহযোগিতায় গ্রাম আদালতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
গ্রাম আদালতের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস বাসসকে জানান, ২০১৭ সালের জুলাই হতে ২০১৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ৩,৩২৬ মামলা গ্রাম আদালতে নথিভূক্ত হয়েছে এবং এরমধ্যে ৩, ১৫৯ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। মামলা নিস্পত্তির হার ৯৫ শতাংশ। বর্তমানে ১৬৭টি মামলা জেলার প্রকল্পাধীন ৪৪টি গ্রাম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। প্রতি মাসে প্রতি ইউনিয়নে গড়ে ৩.৬০টি মামলা দায়ের হয়েছে যা মোটেও আশানুরূপ ছিল না।
চলতি বছরের মার্চ মাসে ৪৪টি ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে ২৫১ মামলা দায়ের হয়েছে।এ হিসেবে প্রতি ইউনিয়নে গড়ে ৫.৭০টি মামলা হয়। এ অগ্রগতির পেছনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সক্রিয় সহায়তা কাজ করেছে। এক্ষেত্রে চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন মিডিয়া গ্রাম আদালতের প্রচার-প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।
গ্রাম আদালত সর্বোচ্চ ৭৫,০০০ টাকা মূল্যমানের দেওয়ানী ও ফৌজদারী সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করে থাকে। এ আদালতে ফৌজদারী মামলার ফি ১০ টাকা ও দেওয়ানী মামলার ফি ২০ টাকা। এর বাইরে এখানে আর কোনো খরচ নেই। এ আদালতে পক্ষগণ নিজের কথা নিজেই বলতে পারেন। এর ফলেই গ্রামের হতদরিদ্র, অসহায় ও নিরীহ পরিবারের কাছে গ্রাম আদালতের সুফল পৌঁছে যাচ্ছে।
ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস আরো জানান,‘ গ্রাম আদালতে কোনো আইনজীবীর দরকার হয় না। গ্রাম আদালতের বিচারিক প্যানেল ৫ সদস্য নিয়ে গঠিত হয় সেখানে অন্তত একজন নারী সদস্য থাকেন। গ্রাম আদালত নারী-পুরুষ সবার জন্য নিরাপদ ও ভয়মুক্ত। সাধারণ জনগণের বিচার ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে গ্রাম আদালত প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে কাজ করছে। এর প্রচার-প্রসারে আমাদের সবার ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন মিডিয়া অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করছে।’
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো.মাজেদুর রহমান খান জেলার প্রকল্পাধীন ৪৪টি ইউনিয়নের সকল চেয়ারম্যান, সচিব এবং গ্রাম আদালত সহকারীদের সাথে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্স করেছিলেন। ভিডিও কনফারেন্সে তিনি গ্রাম আদালত কার্যকর করার জন্যে বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং বিদ্যমান নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কর্ম-কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। গ্রাম আদালত গতিশীল করার জন্যে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবদের আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি যৌথভাবে চাঁদপুরসহ দেশের ২৭ জেলায় ‘ বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প ’বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের সঙ্গে ৪টি জাতীয় পর্যায়ের এনজিও সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। এদের মধ্যে ব্রাস্ট চাঁদপুরে সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। এছাড়াও নোয়াখালী, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, মৌলভিবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় ব্রাস্ট কাজ করছে।
চাঁদপুর জেলায় ৪৪ টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালতে নিষ্পত্তিকৃত মামলার বিপরীতে ২১ মাসে ১,২৭,৫৬,০০০ টাকা ও টাকার সম্পদ ক্ষতিপূরণ বাবদ আদায় হয়েছে যা মামলার আবেদনকারীদের মাঝে আদালতের নিময় মেনে রশিদমূলে যথাসময়ে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এ হিসেবে গড়ে প্রতি মাসে ৬,০৭, ৪০০ টাকা আদায় হয়েছে। অথচ চলতি বছরের মার্চ মাসেই আদায় হয়েছে ১২,৭২,৫০০ টাকা যা বিগত মাসের গড় আদায়ের দ্বিগুণেরও বেশি। মামলার ক্ষতিপূরণ পেয়ে বিচার-প্রার্থীগণ উপকৃত হয়েছেন এবং কেউ কেউ জীবনে নতুন আশা খুঁজে পেয়েছেন। গ্রাম আদালত অনেক ক্ষেত্রে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সহায় হয়ে উঠেছে।