ভোলায় বোরাক চালিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন ইউনুছ

271

ভোলা, ৯ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : জেলা সদরের উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের শারীরিক প্রতিবন্ধী মো: ইউনুছ (৪২) বোরাক (ব্যাটারি চালিত থ্রি-হুইলার) চালিয়ে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন। জয়গুপী গ্রামের এক পা হারানো ইউনুছ গত আড়াই বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তি পরিত্যাগ করে কঠোর পরিশ্রম করে স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন। অদম্য মনোবল ও নিজের প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল ইউনুছের ছেলে মেয়েরা এখন আবার লেখা-পড়া শুরু করছে। এক সময়ের টিনের ঘর ভেঙ্গে চারপাশে পাঁকা দেয়াল তুলে উপরে টিন দিয়েছেন। পঙ্গু জীবনের অসহায়ত্ব ভুলে কাজের মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন সব সময়।
বর্তমানে তার সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন বোরাক চালিয়ে হাজার টাকা অথবা কোন দিন তার চেয়ে বেশি লাভ থাকে। আর বোরাক কেনার ১ বছরের মধ্যেই তার বোরাক কেনার টাকা উঠে আসে। এক সময়ের ট্রাকচালক ইউনুছ জীবনে হার মানতে রাজি নয়। তাইতো অঙ্গহাণীর পরেও বহু চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে জীবন যুদ্ধে নিজেকে টিকিয়ে রখেছেন।
বাসস’র সাথে আলাপকালে মো: ইউনুছ জানান তার জীবনের করুণ কাহিনী। শুরুতেই ট্রাক চালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। বেশ দক্ষতার সাথেই চালাতেন গাড়ি। কিন্তু ২০০৯ সালে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পা হাটুর নিচ থেকে কাটা যায় তার। বাম পায়েও প্রচন্ড চোট পেয়ে অকেজো হয়ে পড়ে। শুরু হয় পঙ্গু জীবনের কষ্টের সময়। চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়। পরে ২০১২ সালের দিকে অনেকটাই বাধ্য হয়ে ভিক্ষা বৃত্তি শুরু করেন।
তিনি বলেন, তখন নিজেকে অনেক ছোট মনে হতো। মানুষের কাছে ভিক্ষার টাকা চাইতে লজ্জা লাগতো। কিন্তু কোন উপায় ছিলোনা। ৪টি ছেলে-মেয়ে নিয়ে স্ত্রীর মাথায় আকাশ ভাঙ্গার মতো অবস্থা। তাই তখন ভিক্ষার টাকা ও প্রতিবন্ধী ভাতায় অনেক কষ্টে জীবন ধারন করতে হতো। কিন্তু ভিক্ষার বিষয়টা নিজের মন থেকে কখোনো সায় দিতোনা। অভাব তখন ভয়ংকর রুপ নিয়েছে বলেন ইউনুছ।
তিনি আরো জানালেন, শেষ পর্যন্ত জমানো টাকা ও ধার দেনা করে ২০১৬ সালের দিকে বোরাক কিনে ১পা দিয়ে চালানো শুরু করি। প্রথম দিকে কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে রপ্ত হয়ে যায়। গত প্রায় আড়াই বছরে ধার-দেনা পরিশোধ করে এখন ভালো আছি। ২ মেয়ে নিয়মিত মাদ্রাসায় যায়। এক ছেলে স্কুলে পড়ে ও বড় ছেলে অটোরিকসা চালায়। স্ত্রী লাইজু বেগমকে নিয়ে সুখের সংসার তার। ইউনুছ বলেন, শারিরীক সমস্যাগ্রস্ত মানুষের যদি কাজ করার সামান্য সুযোগ থাকে তবে ভিক্ষা না করে কাজ করাই সম্মানের। আত্বসম্মান নিয়ে স্বনির্ভর ভাবে বাঁচতে হলে কাজের কোন বিকল্প নেই। কাজই মানুষকে বড় করে জানালেন ইউনুছ।
ইউনুছের স্ত্রী লাইজু বেগম বলেন, ভিক্ষা করলে মানুষ ভালো চোখে দেখেনা। তাই তার স্বামী এখন আর মানুষের কাছে হাত পাতেননা। নিজ চেষ্টায় কর্মের ব্যবস্থা করেছেন। এক সময় অনেক কষ্টের দিন কাটলেও এখন ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন ভালো আছেন তারা।
উত্তর দিঘলদী ইউনিয়ন পরিষোদ চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন মনসুর বাসস’কে বলেন, এক সময়ের পঙ্গু ভিক্ষুক ইউনুছ তার ইচ্ছা শক্তি ও আন্তরিকতা দিয়ে আজ আত্বনির্ভরশীল। ভিক্ষার টাকায় সে সন্তোষ্ট ছিলোনা বলেই কাজ শুরু করে। অন্যান্য শারিরীক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকদের জন্য ইউনুছ একটি দৃষ্টান্ত। তিনি আশা করেন অন্য ভিক্ষুকরাও যাদের সামর্থ আছে তারা কাজের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করবেন। ইউনিয়ন পরিষোদের মাধ্যমে ইউনুছকে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে বলে জানান এ ইউপি চেয়ারম্যান।