বাজিস-৬ : নওগাঁয় আমার বাড়ি আমার খামারে যুক্ত হয়ে মনোয়ারার দিন বদলেছে

149

বাজিস-৬
নওগাঁ-মনোয়ারার দিনবদল
নওগাঁয় আমার বাড়ি আমার খামারে যুক্ত হয়ে মনোয়ারার দিন বদলেছে
নওগাঁ, ৮ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : জেলায় “আমার বাড়ি আমার খামার” কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে দিন বদলেছে মনোয়ারা বেগমের। মনোয়ারা বেগম আমার বাড়ি আমার খামার কর্মসূচি থেকে পর্যায়ক্রমে ঋণ গ্রহণ করে বাজারের ব্যাগ তৈরি এবং সেগুলো বাজারে বিক্রি করে তার সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশকে অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে ১০টি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন আমার বাড়ি আমার খামার তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি।
নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের মনোয়ারা বেগম ২০১১ সালে শুরু থেকেই যুক্ত হন তৎকালীন একটি বাড়ি একটি খামার কার্মসূচির সাথে। বর্তমানে এ কার্যক্রমের নাম দেয়া হয়েছে আমার বাড়ি আমার খামার কার্যক্রম।
মনোয়ারা বেগমের স্বামী আসাদ আলী ২০ বছর আগে মারা গেলে চোখে অন্ধকার দেখেন। কিভাবে সংসার চালাবেন আর কিভাবে সন্তানদের মানুষ করবেন এ দুশ্চিন্তা তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। তখন থেকেই পুরাতন কাপড় দিয়ে বাজারের ব্যাগ তৈরি এবং সেগুলো বাজারে বিক্রি করে কোন রকমে দিনাতিপাত করতে থাকেন। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার তেমন আর চলে না।
২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে মানুষকে স্বাবলম্বী করতে একটি বাড়ি একটি খামার কার্যক্রম চালু করেন। মনোয়ারা বেগম এ কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হন।
বিআরডিবি নওগাঁ’র উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন এ তহবিল থেকে মনোয়ারা বেগম পর্যায়ক্রমে ১০ হাজার টাকা, ১৫ হাজার টাকা, ২০ হাজার টাকা, ২৫ হাজার টাকা, পর পর তিনবার ৩০ হাজার টাকা করে এবং সবশেষে এসএমই ঋণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। শুরু হয় তার রমরমা ব্যবসা। আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
তার সাথে কাজ করেন কন্যা আশামণি এবং পুত্রবধু মোছাঃ সাথী । ঢাকা থেকে কাঁচামাল হিসেবে পুরাতন কাপড় কিনে নিয়ে আনেন। প্রতি কে জি কাপড় তিনি কিনে আনেন ৫০ টাকায়। এক কেজি কাপড় থেকে কমপক্ষে ৩০টি ব্যাগ তৈরি করতে পারেন। এ ৩০টি ব্যাগ বাজারে বিক্রি হয় কম পক্ষে ৮০ টাকায়। এক কেজি কাপড় থেকে তৈরি ব্যাগ বিক্রি করে লাভ করেন ৩০ টাকা। প্রতিদিন তারা দেড়শ থেকে দু’শ ব্যাগ তৈরি করেন। এতে প্রতিদিন তারা নীট মুনাফা অর্জন করেন দেড়শ টাকা থেকে দু’শ টাকা। মাসে কমপক্ষে ৬ হাজার টাকা আয় করেন।
এ ছাড়াও মনোয়ারা বেগম তাঁর কন্যা ও পুত্রবধুদের তৈরি ব্যাগ পাইকারী কিনে নিয়ে সেগুলো বিক্রি করেন। প্রতি ডজন ব্যাগ তিনি ৪০ টাকায় কিনেন আর বিক্রি করেন ৪৫ টাকায়। এতেও তাঁর লাভ ভালোই হয়।
তিনি তার তৈরি এসব ক্রয়কৃত ব্যাগ ঢাকা, সিলেট, শ্রীমঙ্গল এবং মৌলভীবাজারে বিক্রি করেন। সেখানকার পাইকাররা এসে এখান থেকে ব্যাগ কিনে নিয়ে যান আবার মনোয়ারা বেগম বিশেষ ব্যবস্থায় সেগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে থাকেন।
আমার বাড়ি আমার খামার কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়ে অসহায় বিধবা মনোয়ারা বেগমের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এসেছে। আগে বেড়ার ঘরে টিনের ছাউনি দিয়ে বসবাস করতেন। এখন তাদের দালান ঘর হয়েছে। তারসহ ছেলে এবং মেয়ের পৃথক পৃথক দালানঘর হয়েছে। মেয়ের বিয়ে হলেও তারা একসাথে এক বাড়িতেই থাকেন এবং এ ব্যাগ তৈরির কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেছেন বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কল্যাণমুখী এবং জনবান্ধব অনেক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তেমনই তার বিশেষ ১০টি উদ্যোগের অংশ হিসেবে আমার বাড়ি আমার খামার কার্যক্রম মানুষের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
বাসস/সংবাদদাতা/আহো/১৩৩০/নূসী