নাটোরে প্রথম ইনকিউবেশন সেন্টারের কার্যক্রম শুরু

542

নাটোর, ৬ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : দেশের প্রথম শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টারে আইটি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ইনকিউবেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেন্টারটি তথ্য প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের নানামুখী কর্মকান্ডে মুখর হয়ে উঠেছে। আধুনিক দ্বিতল ভবনের প্রায় সকল ইনকিউবেশন সেল ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করছেন তরুণ উদ্যোক্তারা। সেন্টার থেকে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন সফ্টওয়ার, ওয়েবসাইট, মোবাইল এ্যাপস্, গেমস্ ইত্যাদি।
ইনকিউবেশন সেন্টারে কার্যক্রম পরিচালনা করছে নাটোর সফট্। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মওলা শাহীন জানান, ইতোমধ্যে ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট, ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল হাজিরা সফ্টওয়ার,‘আমাদের নাটোর’সহ দুইটি শিক্ষা সংক্রান্ত এ্যাপস, উত্তরা গণভবনের ওয়েবসাইটসহ অসংখ্য লোগো তৈরি করা হয়েছে। চলমান বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ১৬টি চিনিকলের হিসাব সফটওয়্যার তৈরির কাজ উল্লেখযোগ্য।
জে বি টি আইটি এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিক্রম রাজ দেশের খ্যাতনামা ফ্রিল্যান্সারদের একজন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি হয়েছে ১০টি এ্যাপস ও দুইটি গেমস। জে বি টি আইটি’র উদ্ভাবিত এ্যাপস- ‘রেসিপি রান্নাঘর’ গুগল রেসিপি’র দ্বিতীয় সেরা- যা প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ডাউনলোড হয়েছে। এ্যামাজোন ( এ ডাবলইউ এস ) পার্টনার ওয়েব সার্ভিস হিসেবে এ প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। পাশাপাশি ‘রেডিও মৌ’ নামে একটি রেডিও ষ্টেশন এবং দেশের একমাত্র কাস্টমাইজড ই-কমার্স সাইট ‘রংতুলি’ পরিচালনা করে আসছে।
অপর প্রতিষ্ঠান লার্জসেল ডট কম ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এন্ড ফটোশপের উপর শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্ণধার কাওছার আহমেদ ও মোঃ শহিদুল্লাহ।
সেন্টারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয় উদ্যোক্তাদের সাথে। জে বি টি আইটি’র সিইও বিক্রম রাজ বলেন, প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করতে যে দক্ষ জনবল প্রয়োজন তার ঘাটতি রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দক্ষ জনবল সৃষ্টি করা সম্ভব বলে দনে করেন তিনি। সেন্টারের ক্যান্টিনটি সার্বক্ষণিক চালু থাকা, যানবাহন রাখার গ্যারেজ সুবিধা তৈরি করা এবং সেন্টারটির রক্ষণাবেক্ষণে আরো কিছু জনবল নিয়োজিত করা উচিৎ বলেও মনে করেন তিনি।
ফ্রিল্যান্সার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নাটোর জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী নাটোর সফট এর সত্ত্বাধিকারী গোলাম মওলা শাহীন বলেন, ইনকিউবেশন সেন্টারের ছয় তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করা হলে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এসে তাদের নানামুখী কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে সেন্টারটির কার্যক্রমে আরো গতি সঞ্চার করতে পারবেন। উদ্যোক্তাদের রাতেও অবস্থান করতে হয় বলে রেস্ট রুম থাকা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে ডেস্কটপ প্রদান এবং নাটোর জেলার উদ্যোক্তাদের একটি ডাটাবেজ তৈরির দাবিও জানান ফ্রিল্যান্সারদের এ সংগঠক।
সেন্টারের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল ইসলাম বলেন, ইনকিউবেশন সেন্টারে প্রায় সমূদয় জায়গাই আট টাকা স্কয়ার ফিট মূল্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দপ্রাপ্ত ফ্রিল্যন্সাররা নিয়মিত তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। ফ্রিল্যান্সারদের আরো ইনকিউবেশন সেলের চাহিদা রয়েছে।
উল্লেখ্য, নাটোরের পুরনো জেলখানা ভবন এলাকায় আড়াই একর জমির উপরে ছয় কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন শেষে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। দুইটি অংশে বিভক্ত প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পুরনো জেলখানা ভবন সংস্কার করে প্রশিক্ষণ সেন্টার তৈরি ও ছয়তলা ফাউন্ডেশনের উপর নতুন দ্বিতল ভবনে ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণ।
সেন্টারটিতে শুরুতেই গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এন্ড নেটওয়ার্কিং ট্রাবলশ্যুট এবং কন্ডাক্টিং ই- কমার্স ওয়েব সাইট ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ২১টি ব্যাচে মোট ৪৮০ জন শিক্ষিত তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন এবং বর্তমানে কোডিগনেটর এন্ড ওয়ার্ডপ্রেস, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ডিজিটাল মার্কেটিং এন্ড ই-কমার্স, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, টু-ডি এন্ড থ্রি-ডি এনিমেশন ভিডিওগ্রাফিক এন্ড ফটোগ্রাফিক বিষয়ে ৫০০ প্রশিক্ষনার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। সেন্টারটিতে ইনকিউবেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।