বাজিস-৫ : ভোলায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী তীর সংরক্ষণে লক্ষাধিক মানুষের স্বস্তি

267

বাজিস-৫
ভোলা-বাঁধ-নির্মাণ-স্বস্তি
ভোলায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী তীর সংরক্ষণে লক্ষাধিক মানুষের স্বস্তি
ভোলা, ৬ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : জেলা সদরে ব্লক ও জিও ব্যাগের মাধ্যমে মেঘনা পাড় সংরক্ষণে লক্ষাধিক মানুষের মাঝে স্বস্তি নেমে এসেছে। ১’শ ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের দরিয়া খাল থেকে ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলী মাছঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকায় মেঘনা নদীর ভাঙ্গন রোধে পাড় সংরক্ষণ ও ভেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। নদী পাড় রক্ষার মাধ্যমে এ দুটি ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে আশার আলো সঞ্চার হয়েছে। পূরণ হয়েছে স্থানীয়দের দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবি। তাই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও এখন আর ভয় নেই মেঘনা পাড়ের এসব বাসিন্দাদের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ‘ভোলা জেলা শহর সংরক্ষণ প্রকল্প তৃতীয় পর্যায়’ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১২-১৩ অর্থবছরে শুরু হয়ে জুন ২০১৬ তে সমাপ্ত হয় মেঘনা নদীর পাড় সংরক্ষণ কাজ। ৫ দশমিক ৮ মিটার উচ্চতার পাড়ের প্রস্থ ৪ দশমিক ৩০ মিটার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এখানে মোট ১৩ লাখ জিও ব্যাগ ও প্রায় ৮ লাখ সিসি ব্লক স্থাপন করা হয়েছে নদী শাসনের জন্য। ফলে ভাঙ্গন রোধে টেকসই কাজ হওয়াতে নিরাপত্তা বেড়েছে নদী তীরের মানুষের। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: ইউনুছ বাসস’কে বলেন, প্রমত্ত মেঘনার করাল গ্রাসে বহু পরিবার সর্বহারা হয়েছে। বিগত দিনে ভাঙ্গন রোধে স্থায়ীভাবে কোন কাজ করা হয়নি। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গন বেড়ে যেত। এছাড়া অতি জোয়ার অথবা জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতো গ্রামের পর গ্রাম। স্থানীয়দের প্রাণের দাবি ছিলো ব্লকের মাধ্যমে মেঘনার পাড় সংরক্ষণ ও মজবুত ভেড়িবাঁধ নির্মাণ করা। তিনি বলেন, অবশেষে বর্তমান সরকার বাঁধ স্থাপন করায় মানুষের জান-মাল রক্ষা পেয়েছে। বিগত কয়েক বছর থেকেই স্বস্তি ফিরে পেয়েছে এখানকার প্রায় এক লাখেরও বেশি মানুষ। নদী ভাঙ্গন বন্ধ হওয়ায় মানুষের কাজে-কর্মেও বাড়তি গতি এসেছে।
ধনীয়া ইউনয়নের বালিয়াকান্দি এলাকার বাসিন্দা ছগির আহমেদ, বজলু মিয়া, কাসেম হাওলাদার, জামালউদ্দিন, তাজুল ইসলাম ও বিল্লাল হাওলাদার। তারা সবাই কৃষিকাজ করেন। বিগত দিনে বাঁধ না-থাকায় নদীর পানি ক্ষেতে প্রবেশ করত। এতে তাদের প্রায়ই বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হতো। এখন শক্ত বাঁধ থাকায় পানি ঢুকতে পারেনা। ফসলেরও ক্ষতি হয়না। এ জন্য তারা সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
মো: মোতাহার হোসেন বলেন, তিনি মাছের ঘেরের ব্যবসা করেন। আগে অতি জোয়ার বা বন্যা-বাতাস হলেই মাটির ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যেত। এতে পুকুর তলিয়ে গিয়ে লোকসানের মধ্যে পড়তে হতো তাকে। এখন ব্লকের শক্ত বাঁধ হওয়ায় পানি প্রবেশ করতে পারেনা। ফলে বর্ষা মৌসুমেও পুকুর তলিয়ে যাবার আশংকা থাকেনা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশরী বাবুল আক্তার বাসস’কে জানান, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে প্রায় সাড়ে ৫’শ কোটি টাকার সম্পাদ রক্ষা করা গেছে। এতে করে ধনিয়া ও কাচিয়া এ দুটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের জান-মাল ও ফসলী জমির নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। এখন আর উচ্চ জোয়ারে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করতে পারেনা ফসলী জমিতে। ফলে ফসলের ভালো ফলন হচ্ছে। সার্বিকভাবে নদী পাড় সংরক্ষণে মানুষ অনেকটাই স্বস্তিতে আছে।
তুলাতুলী এলাকার মেঘনা পাড়ের বাসিন্দা রুস্তম মাঝি ও আবু কালাম বলেন, আগে বর্ষা মৌসুম এলেই স্থানীয়দের মাঝে আতংক বিরাজ করত। যখন তখন পানি উঠার ভয়ে অস্থির থাকতো সবাই। অনেকেই রাত জেগে পাহারা দিত পানি আসে কিনা দেখার জন্য। এখন দীর্ঘ নদী পাড় সংরক্ষণ করায় সেই ভয় ও উৎকন্ঠা নেই। বরং জোয়ারের সময় ব্লকের উপর দাড়িয়ে নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় বলে জানান তারা।
ভোলা স্বার্থ রক্ষা উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক অমিতাভ রায় অপু মনে করেন, ভোলার মানুষের প্রধান সমস্যা হলো নদী ভাঙ্গন আতংক। আর মেঘনা নদীর কাচিয়া ও ধনিয়া ইউনিয়নের সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্ট। এ পয়েন্ট যদি ভেঙ্গে যায় তবে মূল শহর হুমকির মধ্যে পড়বে। আর এ জেলা শহরের উপর নির্ভর করে জেলার সকল উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা। তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে শুধু ঐ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ নয়, রক্ষা পেয়েছে পুরো জেলা সদর বলে মনে করেন এ উন্নয়নকর্মী।
বাসস/এইচ এ এম/কেইউ/১২০২/নূসী