বাজিস-২ : দর্শনা জয়নগর পথে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে

275

বাজিস-২
চুয়াডাঙ্গা-যাত্রী সংখ্যা
দর্শনা জয়নগর পথে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে
চুয়াডাঙ্গা, ৬ এপ্রিল ২০১৯ (বাসস) : জেলার দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে সড়ক পথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত ২০১৭ সালের তুলনায় গত ২০১৮ সালে আরো বেড়ে রেকর্ড অতিক্রম করেছে। যাত্রীসেবার মান আরো উন্নতি করণে ইমিগ্রেশনের পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগ আন্তরিক হলে যাতায়াতকারী যাত্রী সংখ্যা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের যাত্রী সংখ্যা ছিলো প্রায় ৫ লাখ। ১৯৮৬ সালে দর্শনার জয়নগরে কাষ্টমস্ ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থানান্তরের পর বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ যাত্রী যাতায়াত করেছিলো ২০১৭ সালে। ওই বছর ৪ লাখ ২০ হাজার ৯৮১ জন ভারত-বাংলাদেশ যাত্রী যাতায়াত করে স্মরণকালের রেকর্ড ভেঙ্গেছিলো। ২০১৭ সালের রেকর্ড ভাঙ্গলো ২০১৮ সালে। ২০১৮ সালের রেকর্ড ভাঙ্গতে হলে ইমিগ্রেশনের মতো আন্তরিক হতে হবে অন্যান্য বিভাগকেও।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৬২ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা দিয়ে ভারতের গেদে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে তা বন্ধ হয়ে গেলেও দেশ স্বাধীনের পর আবারো চালু হয়। এ সময় সীমিত আকারে হলেও রেলপথ ধরে পায়ে হেঁটে পাসপোর্ট যাত্রীদের চলাচল ছিলো। তখন ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হতো দর্শনা ষ্টেশনের উপর ছোট্ট একটা কক্ষে। পরবর্তীতে যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ১৯৮৬ সালে দর্শনার সীমান্ত সংলগ্ন জয়নগরে কাস্টমস্ চেকপোস্ট স্থানান্তরের মধ্যদিয়ে শুরু হয় কার্যক্রম। তখন ট্রেন লাইন ধরে যাত্রীদের পায়ে হেঁটে ভারতের গেদে স্টেশনে পৌঁছাতে হতো। বর্তমানে রেল লাইনের পাশ দিয়ে পাকা সড়ক নির্মিত হয়েছে। পাশাপাশি বিজিবির উদ্যোগে রাস্তার দুধার দিয়ে লাগানো হয়েছে মনোমুগ্ধকর ফুলের বাগান। অপর দিকে ভারতের অংশেও নির্মাণ করা হয়েছে পাকা সড়ক। ফলে যাত্রীরা ভ্যানযোগে সহজেই উভয় দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারছে। বাংলাদেশের যেকোন সীমান্তরুটের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সাথে ঢাকার দূরত্ব দর্শনা দিয়ে সড়ক পথে কম এবং রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ রুটে যাত্রীদের চলাচল ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতীতের বছর গুলোতে যেখানে সারা বছরে ২/৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতো, সেখানে ২০১৬ সালে এ রুটে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৩৭ জন বাংলাদেশী, ১৩ হাজার ৯৮১ জন ভারতীয় এবং ৪৭ জন অন্যান্য দেশী। একই সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৮৬ জন বাংলাদেশী, ১৩ হাজার ৪৩৮ জন ভারতীয় এবং ৫৫ অন্যান্যদেশী। অপর দিকে ২০১৭ সালে ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ২ লাখ ৪০ জন বাংলাদেশী, ১৪ হাজার ৭০২ জন ভারতীয় এবং ১০৩ জন অন্যান্য দেশী। ওই বছরি ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ১ লাখ ৯১ হাজার ১৪৮ জন বাংলাদেশী, ১৪ হাজার ৯০৪ জন ভারতীয় এবং ৮৪ জন অন্যান্যদেশী অর্থাৎ গত বছর সর্বমোট ৪ লাখ ২০ হাজার ৯৮১ জনের রেকর্ড পরিমান যাত্রী যাতায়াত করেছে। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারী যাত্রী সংখ্যা সর্বমোট ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৪০৩ জন। যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশী। যে কারণে ভেঙ্গেছে সর্বকালের রেকর্ড। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ভারত-বাংলাদেশ যতায়াতকারি যাত্রী সংখ্যা ৪৩ হাজার ৪১৯, ফেব্রুয়ারিতে ৫৭ হাজার ৫১, মার্চে ৪৯ হাজার ৩১২, এপ্রিলে ৪৪ হাজার ২৯৩, মে ৪৩ হাজার ৫৪৭, জুনে ৪১ হাজার ১৩৩, জুলাইয়ে ৩৮ হাজার ৬০৮ ও আগষ্ট মাসে ৪১ হাজার ৪২১, সেপ্টেম্বরে ২৫ হাজার ৫২৭, অক্টোবরে ৩৯ হাজার ৩৬, নভেম্বরে ৪৩ হাজার ৩৯৮ ও ডিসেম্বরে ৪৩ হাজার ৪৮ জন। গত বছরে যাতায়াতকারি যাত্রী সংখ্যা সর্বমোট ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৪০৩ জন। বাংলাদেশী যাত্রীদের ভারত যাওয়ার পিছনে যে কারণগুলো লক্ষনীয়, তার মধ্যে ভারত কর্তৃক ভিসা ব্যবস্থা সহজীকরন, চিকিৎসার জন্য ভারত গমন এছাড়াও দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের প্রবণতা বৃদ্ধি ইত্যাদি। তবে দর্শনা রুটে যাত্রীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য চেকপোস্টের সঙ্গে দর্শনার সংযোগ সড়কগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করা প্রয়োজন। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জয়নগর থেকে বাসস্ট্যান্ড রশিক শাহর মাজার পর্যšন্ত সড়ক প্রশস্ত করে পাকাকরণ করা হলেও দর্শনা পুরাতন বাজার থেকে জয়নগর চেকপোষ্ট সড়কটির দীর্ঘদিন বেহাল দশায় থাকলেও সম্প্রতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। এ সড়কটি দ্রুত মেরামত জরুরী বলে মন্তব্য এলাকাবাসির। পাশাপাশি চেকপোস্টে ভ্রমনকর পরিশোধের সুবিধার্থে সোনালী ব্যাংকের একটি বুথ খোলা প্রয়োজন জয়নগের, কারণ কোন যাত্রী ভুলক্রমে ট্রাভেলট্যাক্স প্রদান করে না আসলে তাকে আবার ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দর্শনায় ফেরত আসতে হয়। একই সাথে ঢাকা-খুলনা গামী ডাউন আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের দর্শনা হল্ট স্টেশনে স্টপেজ দিলে ঢাকা থেকে আগত যাত্রীদের জন্য এ পথ আরো সহজতর হবে। জয়নগর চেকপোষ্টে শুরু থেকেই কাস্টমসের একটি ছোট কক্ষে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম পরিচালনা করছে । এতে কাজ বিঘিœত হচ্ছে। তবে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা করেছে ৫ টি কম্পিউটারসহ আধুনিক সরাঞ্জামের। এ ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে রয়েছেন ৩ জন উপ-পরিদর্শক, ৫ জন সহকারি উপ-পরিদর্শকসহ ১০ জন পুলিশ কনস্টেবল। এ ছাড়া অপেক্ষামান যাত্রীদের জন্য কাস্টমসের বারান্দায় একাধিক ফ্যান ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছে। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের যাত্রীসেবা মূলক ব্যবস্থা থাকলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অনেকটাই উদাসিন। এ ছাড়া বিজিবির লোকবল সংকটে যাত্রীদের ব্যাগ তল্ল¬াশি, নাম-পরিচয় লিখনসহ বিভিন্ন কারণে সমস্যার সৃস্টি হচ্ছে। যাত্রীদের ইমিগ্রেশন-কাস্টমসের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষ করে থমকে যেতে হচ্ছে বিজিবি চেকপোষ্টে। যে কারণে বিজিবি চেকপোষ্টে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। আইসিপি বিজিবি ইনচার্জ হাবিলদার ইকবাল হোসেন বলেছেন, যাত্রীসেবায় সর্বত্রা দায়িত্ব পালনে আমরা আন্তরিক। এ দিকে ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দর্শনা জয়নগর ইমিগ্রেশনের ৩ তলা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল। নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলতি বছরের শুরুতে নতুন ভবনে কার্যক্রম চালু করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। ভবনে কিছু কাজ বাকী থাকায় আরো কিছুদিন সময় লাগতে পারে। নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু হলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যাত্রী সেবা আরো বাড়বে বলে মনে করছেন ইমিগ্রেশন ইনচার্জ এসআই রাশিদুল হাসান। নির্মাণাধীন এ ভবনটি শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত করণ করা হবে।
বাসস/সংবাদদাতা/কেইউ/১০৫৭/নূসী