বাজিস-৩ : নার্সারীতে সফল লক্ষ্মীপুরের নুর উদ্দিন

232

বাজিস-৩
লক্ষ্মীপুর-নার্সারীতে নুরউদ্দিন
নার্সারীতে সফল লক্ষ্মীপুরের নুর উদ্দিন
লক্ষ্মীপুর, ২ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : এক সময় অন্যের নার্সারী থেকে গাছের চারা কিনে ভ্যানে করে বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করতাম। এখন আমার নার্সারী আছে। নার্সারীর আয় দিয়ে ভালোভাবেই চলছে আমার সংসার। তাছাড়া আরো অনেকের কর্মসংস্থান করে দিতে পেরে আমি আনন্দিত। হাসিমুখে ধীরে ধীরে কথা গুলো বলছিলেন লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা ভবন সংলগ্ন ‘মায়ের দোয়া আল আমিন’ নার্সারীর মালিক মোহাম্মদ নুর উদ্দিন।
প্রায় তিন একর জমি জুড়ে নুর উদ্দিনের নার্সারী। বর্তমানে প্রায় ২৫ লাখ টাকা মূল্যের চারা গাছ রয়েছে এ নার্সারীতে। এর মধ্যে রয়েছে শতাধিক প্রজাতির ফলদ, বনজ, ওষুধি, শাক সবজি ও ফুল গাছের চারা। নার্সারীর আয় দিয়ে ভালোভাবেই চলছে নুর উদ্দিনের সংসার। এখানে নিয়মিত কাজ করে ১০-১২ জন শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতিমাসে শ্রমিকদের মজুরী ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানিয়েছেন নুর উদ্দিন। বাৎসরিক হিসাবে লাভের পরিমাণ প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার মতো। তবে জমির ইজারা বাবদ প্রতিবছর ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয় তাকে।
নুর উদ্দিনের নার্সারীতে প্রায়ই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পর্যবেক্ষণে আসেন। যারা বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। চট্টগ্রাম, বরিশাল, বগুড়া ও ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলা থেকে নার্সারীর জন্য বীজ, গাছের চারা ও কলম সংগ্রহ করেন নুর উদ্দিন। আবার নিজের নার্সারী থেকেও তিনি বিভিন্ন জেলায় চারাগাছ ও কলম সরবরাহ করে থাকেন। তবে সারা বছরই জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে, চারাগাছ ও কলমের চাহিদা মিটে এ নার্সারী থেকে। সর্বনি¤œ ১০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যের চারাগাছ ও কলম রয়েছে এখানে। এ নার্সারীতে মাসিক বিক্রির পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ টাকা।
জেলা সদরের দত্তপাড়া ইউনিয়নের তোতারখিল গ্রামের বাসিন্দা নুর উদ্দিন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে ডায়েরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে তার বাবা শরাফত আলী মারা যান। তখন নুর উদ্দিনের বয়স ছিল ১ বছর ৯ মাস। একমাত্র সন্তানকে কোলে পিঠে করে বড় করেন মা জীবনের নেছা। কিন্তু চরম অভাব অনটনের কারণে ছেলেকে পড়ালেখার সুযোগ করে দিতে পারেন নি তিনি। কিশোর বয়সেই কাজে লেগে যান নুর উদ্দিন। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন তিনি। বেশ কিছু দিন রাজধানী ঢাকার সদরঘাট এলাকায় জুতার ব্যবসাও করেন। ১৯৮৮ সালের বন্যায় তার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওইসময় এলাকায় ফিরে আসেন তিনি। অনির্বাণ ক্লাব নামে স্থানীয় একটি সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত হন নুর উদ্দিন।
একদিন ওই ক্লাবের আঙ্গিনায় লাগানোর জন্য পার্শ¦বর্তী একটি নার্সারীতে গিয়ে দুটি গাছের চারা ক্রয় করেন নুর উদ্দিন। সেই থেকে গাছ ও নার্সারীর সঙ্গে মিশে যান তিনি। স্বপ্ন দেখেন নার্সারী করার। নিজের কাছে গচ্ছিত থাকা মাত্র পাঁচশত টাকা নিয়ে তিনি গাছের চারা কেনাবেচা শুরু করেন। প্রথমে ভ্যান গাড়ি ভাড়া করে বিভিন্ন নার্সারী থেকে বীজ, চারাগাছ ও কলম ক্রয় করে হাটবাজারে বিক্রি করতে নুর উদ্দিন। ১৯৯৩ সালে ২ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জে ৩৬ শতাংশ জমি ইজারা নিয়ে নার্সারী শুরু করেন তিনি। আনুষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ না থাকলেও দেখে দেখে নার্সারী ব্যবসার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন তিনি। এভাবেই ভাগ্য বদলে যায় নুর উদ্দিনের। ২০১০ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের বসুদুহিতা গ্রামে প্রায় ৩ একর জমি ইজারা নিয়ে ‘মায়ের দোয়া আল আমিন’ নামে আরো একটি নার্সারী দেন। এটাই এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় নার্সারী। এ নার্সারীর পাশেই রয়েছে নবনির্মিত চন্দ্রগঞ্জ থানা ভবন।
নুর উদ্দিনের বয়স এখন প্রায় ৫৮ বছর। তার সংসারে রয়েছে স্ত্রী, ৪ মেয়ে ও ১ ছেলে। ছেলে আল আমিন পড়ছে স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণিতে। ছোট মেয়ে শাহীনুর আক্তার এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সেজো মেয়ে খালেদা আক্তার পড়ছে কলেজে। বড় দুই মেয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসে। শুধুমাত্র নার্সারীর আয় দিয়েই ভালোভাবে চলছে নুর উদ্দিনের সংসার। তিনি দায়িত্ব পালন করছেন জেলা নার্সারী এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি পদে।
বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংকে ১০ লাখ ও ব্র্যাক এনজিওতে ৫ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে নুর উদ্দিনের। তাছাড়া আরো ৫ লাখ টাকা আত্মীয় স্বজনকে দেনা রয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আয়োজিত ৭টি মেলায় অংশগ্রহণ করে উন্নত মানের বীজ, গাছের চারা ও কলম প্রদর্শনীতে ৬ বার পুরস্কার জিতেছেন নুর উদ্দিন।
বাসস/সংবাদদাতা/কেইউ/১১১৫/নূসী