দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিনে নদী ভাঙ্গন রোধে সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকার কাজ শেষের দিকে

263
dav

ভোলা, ১ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলা নিয়ে গঠিত ভোলা-২ আসনে মেঘনা নদীর ভাঙ্গন রোধে ৫শ’ ৫১ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ শেষ পর্যায়ে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড’র বাস্তবায়নে পোল্ডার ৫৬/৫৭ রক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে ভাঙ্গন কবলতি এ দু’টি উপজেলার প্রায় সাড়ে ৯ কিলোমিটার নদী তীর এলাকা সংরক্ষণ করা হচ্ছে ব্লক ও জিও ব্যাগ স্থাপনের মাধ্যমে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া কাজ ২০২০ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৭৫ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া এ দুটি উপজেলার নদী নিয়ন্ত্রণে আরো ৫ হাজার কোটি টাকার বৃহৎ ১টি প্রকল্প প্রণয়ন প্রক্রিয়া চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আক্তার বাসস’কে জানান, জেলার দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলায় নদী তীর রক্ষায় মোট ৫০ লাখ ১৯ হাজার ৯২৫ টি সিসি ব্লক ও ১৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫’শ ১৯টি জিও ব্যাগ স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে ৪০ লাখ ৬০ হাজার ব্লক তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। যার ৮০ ভাগ নদী পাড় রক্ষায় স্থাপন হয়েছে। এছাড়া ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৯১৯টি জিও ব্যাগ স্থাপন হয়েছে। তিনি বলেন, স্থাপনের জন্য জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে আরো ৩২ হাজার। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এখানকার ফসলি জমি, বাড়ি-ঘর, বিভিন্ন স্থাপনাসহ ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য (দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন) আলী আজম মুকুল বাসস’কে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যখনই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়, তখনই দেশের অবহেলিত এলাকায় উন্নয়ন হয়। নদী ভাঙ্গন ছিলো এ এলাকার মানুষের প্রধান সমস্যা। পূর্বে শুধুমাত্র নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে বহু পরিবার এ এলাকা ত্যাগ করেছেন। এমপি আরো জানান, ইতোমধ্যে ভাঙ্গন রোধে কাজ শেষের পথে রয়েছে। তাই আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে আশা তার। এছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে নদী ভাঙ্গনের আতংক কেটে গিয়ে নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।
নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আক্তার আরো জানান, উন্নয়ন কাজের মাধ্যমে এখানে প্রায় ২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রকল্পের মোট ২২টি প্যাকেজের মধ্যে ২টির কাজ সমাপ্ত হয়েছে। চলমান ২০টির মধ্যে ১৩টির কাজ শেষ হবে চলতি বছরের জুনের মধ্যে। কাজের অগ্রগতি বেশ সন্তোষজনক। নির্ধারিত সময়ের আগেই এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আশা করেন তিনি।
এদিকে স্থানীয়দের প্রাণের দাবি নদী ভাঙ্গন বন্ধে সিসি ব্লকের কাজ শেষের দিকে হওয়ায় মানুষের মাঝে স্বস্তি নেমে এসেছে। বিগত দিনে অন্যান্য সরকারের মেয়াদে এখানে নদী ভাঙ্গনরোধে টেকসই কোন ভূমিকা না নেয়ায় হুমকির মুখে ছিল এ জনপদ। অবশেষে বর্তমান সরকার নদী নিয়ন্ত্রণে উন্নয়ন কাজ শুরু করায় আনন্দ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে ভোলা-২ আসনের জনগণ।
দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন লাবু বলেন, ব্লকের মাধ্যমে নদী ভাঙ্গন বন্ধের কাজ চলমান থাকায় এখানে জমির দাম ৪ থেকে ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে স্থানীয় বেকাররা এখানে কাজের সুযোগ পেয়েছে। নদী পাড়ে অনেক নিত্য নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। ফলে মানুষ অত্যন্ত খুশি।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা ইউনিয়নের মেঘনা তীরবর্তী বাটামারা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মঞ্জুর হাওলাদার বলেন, মেঘনার করাল গ্রাসে এ এলাকার অনেকেই ভিটে মাটি হারিয়েছেন। কয়েকবছর আগেও এখান থেকে বহু পরিবার তাদের ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এখন ব্লকের কাজ শুরু হওয়ায় মানুষ আর ঘর-বাড়ি সরাচ্ছেন না। এখানেই এখন নিত্য নতুন বাড়ি-ঘর তৈরি করছে। স্কুল শিক্ষক সেলিমউদ্দিন বলেন, সরকার নদী তীর সংরক্ষণের প্রকল্প হাতে নেয়ায় এ দুটি উপজেলার সমস্যা কেটে গিয়ে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোক্ত হচ্ছে।