বাজিস-৫ : নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর চর কেটে বালু বিক্রি : কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

150

বাজিস-৫
হবিগঞ্জ-বালু বিক্রি
নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর চর কেটে বালু বিক্রি : কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
হবিগঞ্জ, ৩১ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নে কুশিয়ারা নদীর চর কেটে বালু বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। কোনো ধরনের ইজারা ছাড়াই উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের কসবা গ্রামে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে এ ঘটনা ঘটছে। এর ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই সরকারের সম্পদ বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে। যদিও উপজেলা প্রশাসন অভিযোগ অস্বীকার করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের বুক চিড়ে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদীতে বর্তমান সময়ে পানি না থাকায় কসবা গ্রামে বিশাল চর জেগেছে। কয়েকমাস ধরে বিশাল স্থান নিয়ে জাগা এ চরে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র কসবা গ্রামের কুশিয়ারা নদীর ঘাট এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। প্রতিদিন ওই চক্রের অর্ধশতাধিক শ্রমিক নদীর চর কেটে ট্রাকে বালু তোলে দেয়। বালুগুলো বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়। নদীর চর থেকে প্রতি ট্রাক বালুর দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে বালু বিক্রি করা হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর চরের বালু বিক্রি করে প্রভাবশালী মহল লাভবান হলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছত্রছায়ায় সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে বন্যা কবলিত এলাকায় নদীর চর কাটার ফলে আগামী দিনে বন্যার কবলে দীঘলবাক এলাকার আরো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
এদিকে বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে দীঘলবাক ইউনিয়নে গত বছর প্রায় কয়েক শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যায়। ঝুকিঁপূর্ণ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও কী ভাবে প্রকাশ্যে এ ইউনিয়নে নদীর চর কেটে অবাধে বালু বিক্রি করা হচ্ছে এনিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন,নদী মাতৃক আমাদের এ বাংলাদেশ । কিছু অসাধু লোকজনের কারণে নদীর চর কেটে বালু বিক্রি করার উৎসব চলছে। কুশিয়ারা নদীর একটি অংশ নবীগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত দীঘলবাক ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। একের পর এক নদীর চর কেটে বালু বিক্রি করার ফলে এলাকাটি বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে আরো বেশি ঝুকিঁপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাই দ্রুত চর কাটা বন্ধে প্রশাসন সোচ্চার হবে বলে আশাবাদী।
স্থানীয় দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ এওলা মিয়া বলেন, কসবায় কুশিয়ারা নদীর চর কেটে বালু বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নেই। যেহেতু সংবাদকর্মীরা আমার নজরে দিয়েছে আমি শিগগিরই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এবং আগামী আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে এ বিষয়টি তোলে ধরবো।
নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাউল গনি ওসমানী চর কেটে বালু বিক্রির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এখানে একাধিক পক্ষ কুশিয়ারা নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে বালু বিক্রি করে আসছে। এ ব্যাপারে কিছুদিন পূর্বে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং বালুর স্তুপ জব্দ করা হয়। চর থেকে বালু বিক্রি বন্ধে দ্রুত পুলিশের নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ বিন হাসান বলেন,কিছুদিন পূর্বে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নদীর চর থেকে বালু কাটা ও বিক্রি বন্ধ করা এবং বালু জব্দ করা হয়। সাংবাদিকদের মাধ্যমে আবারো চর থেকে বালু কাটার সংবাদ পেয়েছি যারা বালু বিক্রি করছে তাদের সবার বিরুদ্ধে শিগগিরই নিদিষ্ট বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর আওতায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু বিক্রির করার বিষয়ে ইউওনও বলেন, যারা এ ধরনের অভিযোগ করেছে তা ভিত্তিহীন। বালু যারা চুরি করে এবং সরকারকে রাজস্ব না দিয়ে যারা এ ধরণের কার্যক্রম করে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যান্ত শক্ত আমরা এ বিষয় কঠোরভাবে দমন করবো।
বাসস/সংবাদদাতা/আহো/১৩২০/নূসী